শাদমান শাবাব শাবি থেকে :
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় ৬২ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। বাকি ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। তবে মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) একদল তরুণ গবেষকের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
১৭ অক্টোবর ‘হেলিয়ন’ নামের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে “মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান এবং সচেতনতা” শীর্ষক এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। শাবির পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে এ গবেষণা দলে ছিলেন একই বিভাগের চার শিক্ষার্থী। তাঁরা হচ্ছেন মো. আবু বকর সিদ্দীক, মোসাদ্দিকুর রহমান অভি, তানভীর আহাম্মেদ এবং মুহাম্মদ আব্দুল বাকের চৌধুরী।
অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সাস্ট রিসার্চ সেন্টার’ এর অর্থায়নে দেশের ৯৬টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর ওপর অনলাইনে এই জরিপ চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির কারণ হিসেবে গবেষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অস্বাস্থ্যকর আবাসন ব্যবস্থা, অবাধ ও সমস্যাগ্রস্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার, পড়াশুনার চাপ, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা কম, কিন্তু সচেতনতা বেশি। ২২ বছরের অধিক বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে সচেতনতা রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে দেড় গুণ বেশি জানেন। আবার ব্যক্তিগত আয় এবং পরিবার থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা পাচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান বেশি। অন্যদিকে, শুধুমাত্র পরিবারের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ নির্বাহ করছেন এমন ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান সবচেয়ে কম।
গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ৭৪.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সামাজিক সমস্যাকে এবং ৫২.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিবেশ দূষণকে (শব্দ দূষণ, উৎকট দুর্গন্ধ ইত্যাদি) মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী করেছেন। অন্যদিকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছাত্র-ছাত্রী মনে করেন, মানসিক অসুস্থতার জন্য দায়ী মানুষের ভাগ্য কিংবা কালো যাদু। ৪০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী মনে করেন, আধুনিক মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মানসিক সমস্যার প্রতিকার করতে পারে৷ অন্যদিকে, ৯০ শতাংশেরও অধিক শিক্ষার্থীর মতে, পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি প্রদর্শন এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তুলতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক সুরক্ষার জন্য প্রথম বর্ষ থেকে ক্যাম্পেইন, ওয়ার্কশপ, সেমিনার এবং কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করা এবং কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে মানসিক রোগের জন্য মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন বলে গবেষণায় মতামত দেওয়া হয়েছে।