কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের রফতানি আয় কমে গেছে। তবে বৈশ্বিক এই সংকটের মাঝেও দেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ২০২২-২৩ অর্থবছর (জুলাই-অক্টোবর)-এর সর্বশেষ রফতানি তথ্য প্রকাশ করেছে। অক্টোবরে সামগ্রিক তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি ৩.২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এক বছরে রফতানি ৩.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩)-এর প্রথম চার মাসে সামগ্রিক পোশাক পণ্য রফতানি ১৩.৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে বছরওয়ারী প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.৫৫ শতাংশ।
অক্টোবরে নিটওয়্যার এবং ওভেন খাত থেকে রফতানি যথাক্রমে ১.৪৬ এবং ৫.৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিটওয়্যার পণ্য রফতানি ৭.৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ওভেন রফতানি ৬.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৭.১৪ এবং ১৫.০৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘অক্টোবরে তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও এই খাতে এ ধরনের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিকে স্বাগত জানাই।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিশ্বব্যাপী খুচরা বাজারগুলো সংগ্রামরত এবং ক্রেতারা নতুন কার্যাদেশ প্রদান এবং ইনভেনটরি পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ অনুসরণ করছে, তাই পোশাক খাতের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আগামী মাসগুলোতে কার্যাদেশ প্রাপ্তি এবং প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে আমি আশাবাদী নই।’
তিনি উল্লেখ করেন, একক মাসে ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি উল্লেখযোগ্য। আমাদের শিল্পের আরও পণ্য সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। আমরা পণ্য এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণসহ নতুন সুযোগগুলো অন্বেষণ করছি।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর মাসে রফতানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
ইপিবি বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরে ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা ২০২১ সালের অক্টোবরে ছিল ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৩ হাজার মার্কিন ডলার। এই হিসাবে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের তুলনায় ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ৩৭ কোটি ৯ লাখ ১০ হাজার ডলার রফতানি আয় কমেছে। যা শতাংশের হিসেবে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়েছে। এ কারণে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের রফতানি আয় কমছে।
অবশ্য তৈরি পোশাক মালিকসহ অন্য ব্যবসায়ীরা আগেই শঙ্কা প্রকাশ করছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজার থেকে ক্রয় আদেশ কমে যাবে। ফলে দেশের রফতানি আয়ও কমে আসবে।
ইপিবির তথ্যমতে, সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ রফতানি আয় কমেছে ২০২২ সালের অক্টোবরে। এ মাসে রফতানি আয় খাতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেখানে রফতানি হয়েছে মাত্র ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলারের। অর্থাৎ ৬৪ কোটি ৩৩ লাখ ৮ হাজার ডলার কম হয়েছে।
ইপিবির তথ্য বলছে, ১৩ মাস টানা রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধির পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর টানা দুই মাস তার আগের বছরের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে।
ইপিবি জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) বিশ্ববাজারে দেশের পণ্য রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৬৮৫ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার ইউএস ডলারের। এই চার মাসে সরকারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৪২ কোটি ইউএস ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৬ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার ইউএস ডলার বা ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কম হয়েছে।
তবে এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের একই সময়ে সঙ্গে তুলনা করলে এখনও রফতানি আয়ের হার পজিটিভ রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রফতানি আয় হয়েছিল ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ইউএস ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এখনও ৭ দশমিক ১ শতাংশ রফতানি আয় বেড়েছে।
ইপিএসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম রফতানি আয়ে হোঁচট খায় বাংলাদেশ। ওই মাসে বাংলাদেশ ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ (৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ৭ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি আয় হয়েছিল ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৫ ডলারের পণ্য।
একক মাসে হিসেবে সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি আয় কমেছে। কিন্তু আগের দুই মাস জুলাই-আগস্টে আয় বেড়েছিল। সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ২৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ডলারের পণ্য বিদেশে রফতানি করেছে বাংলাদেশ।
২০২১ সালের প্রথম তিন মাসের রফতানি আয় ছিল এক হাজার ১০২ কোটি ১৯ লাখ ৫ হাজার ডলার। সেই তুলনায় তুলনায় ২০২২ সালের একই সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।