সুস্থ রাখার পরিবেশ

5

আধুনিক নগরজীবনে এবং যন্ত্রসভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে ক্রমেই কমছে মানুষের শারীরিক ক্রিয়াকর্ম। এর ফল হচ্ছে মারাত্মক। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতাসহ বেশ কিছু অসংক্রামক রোগ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদন বলছে, শারীরিক সক্রিয়তার অভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এসব রোগে ভুগবে।
এসব রোগ ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর দুই হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। বাংলাদেশ সময় গত বুধবার ভোরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সব বয়সী ও সামর্থ্যবান মানুষের শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য সরকারগুলোকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শরীরচর্চা ও শারীরিক সক্রিয়তা একজন মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে এটি কমবেশি সবারই জানা কথা। কিন্তু এই ব্যস্ত নগরজীবনে কজন মানুষ সেই শারীরিক সক্রিয়তার দিকটি মেনে চলেন কিংবা মেনে চলতে পারেন? বেশির ভাগই তা পারেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দিনে অন্তত এক ঘণ্টা শারীরিক কর্মকাণ্ড, যেমন হাঁটা, খেলাধূলা, সাইকেল চালানো ইত্যাদির সুপারিশ করা হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষই তা করেন না। আমাদের দেশে শারীরিক সক্রিয়তার অভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও কিশোররা। শহরগুলোতে খেলার মাঠ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনেক এলাকায় তা একেবারেই নেই। ছোট ছোট খোপের মতো বাসায় শিশুদের বন্দি থাকতে হয়। রাস্তায় বের হওয়াও নিরাপদ নয়। স্কুলগুলোতেও শরীরচর্চা বা খেলাধুলার সুযোগ কম। বেশির ভাগ অভিভাবক কিশোরদের হাতে মোবাইল ফোন বা ভিডিও গেম তুলে দেন এবং তারা তা নিয়েই দিন-রাত ব্যস্ত থাকে। বয়স্কদেরও রাস্তায় হাঁটার মতো পরিবেশ নেই। যানবাহনের চাপ, দূষণের পরিমাণও অনেক বেশি। সাইকেল চালানোর মতো অবস্থা নেই বললেই চলে। জিম বা শরীরচর্চার বাণিজ্যিক উদ্যোগ কিছু থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। আবার সামান্য যা আছে তা-ও উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা। এর পরও রোগীর ঠাঁই হয় না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় রয়েছে অনেক ওষুধের দোকান। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে চিকিৎসা ও ওষুধের পেছনে। আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে, আমরা কি শুধু হাসপাতাল-ওষুধের আয়োজনই বাড়াব, নাকি মানুষকে সুস্থ রাখার মতো পরিবেশ তৈরিরও উদ্যোগ নেব। আমরা মনে করি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি।