বিশ্বনাথ থেকে সংবাদদাতা :
সেতুর টোল ফাঁকি দেওয়াকে কেন্দ্র করে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজীতে গত রবিবার রাতে ‘মির্জারগাঁও ও পাঁচগাঁও (সাঙ্গিরাই, মোল্লারগাঁও, কেশবপুর, কাজিরগাঁও, দোকানীপাড়া) গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় ৬৯ জনের নাম উল্লেখ এবং আরো ৩ শতাধিক লোককে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে এসল্ট মামলা দায়ের করেছে থানা পুলিশ। মামলা নং ৮ (১৭-১০-২২)।
সংঘর্ষে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গাজী আতাউর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম, এসআই বিনয় চক্রবর্তী, মামুনুর রশীদ, জয়ন্ত সরকারসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ায় পুলিশ এসল্ট মামলাটি দায়ের করা হয়। থানার এসআই বিনয় চক্রবর্তী বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করবেন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম।
এদিকে সংঘর্ষের পর গত রবিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ উভয় পক্ষের ২৭ জনকে গ্রেফতার করে। গতকাল সোমবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের পুত্র গোলাম মওলা (৪২), মৃত শমর আলীর পুত্র রফিকুল ইসলাম বাবলু মিয়া (৩৭), আব্দুল মতিনের পুত্র আব্দুস সহিদ (৩৫), আলা উদ্দিনের পুত্র আরিফ উদ্দিন (৩২), ফরিদ উদ্দিনের পুত্র আলী আহমদ (৩৫), হেলাল মিয়ার পুত্র শফিল মিয়া (৩২), মইজ উদ্দিনের পুত্র সুমেল আহমদ (২২), রায়হান উদ্দিনের পুত্র হোসাইন (২০), মৃত বিলাল উদ্দিনের পুত্র হাফিজুর রহমান (২৬), মৃত ফারুক আহমদের পুত্র শাকরান আহমদ (২০), শাহনুর মিয়ার পুত্র জাহেদ মিয়া (২৫), জয়নাল আবেদীনের পুত্র জুনেদ আহমদ (১৯), মৃত জরিফ উদ্দিনের পুত্র আবুল খয়ের (৩৫), আব্দুল হকের পুত্র সালেহ আহমদ (৪০), উবায়দুর রহমান শামীমের পুত্র মাহবুব হাসান জুবায়ের (২২), মনু মিয়ার পুত্র শাহীন মিয়া (২৩), মৃত জয়নুল হকের পুত্র কালা মিয়া (৪৫), মৃত আছমত আলীর পুত্র আশিদুল হক (৩০), মরম আলী পুত্র হেলাল হোসেন (২৭), মৃত আসর আলীর পুত্র ইসলাম উদ্দিন (৩২), লামাকাজী গ্রামের রেজু মিয়ার পুত্র নজির মিয়া (১৮), গোলাম মোস্তফার পুত্র ইকবাল হোসেন (২৪), কেশবপুর গ্রামের মৃত আজর আলীর পুত্র এ কে এম দুলাল (৪৯), দোকানী পাড়া গ্রামের তোতা মিয়ার পুত্র আব্দুল হক, কাজিরগাঁও গ্রামের মৃত রজব আলীর পুত্র সমুজ আলী (৩০), মৃত তাহের আলীর পুত্র ইমরান আহমেদ (১৯), মৃত রইছ আলীর পুত্র ফয়জুল ইসলাম (৩৫)।
এ ঘটনায় পুলিশের এসল্ট মামলা দায়ের ও উভয় পক্ষের ২৭ জনকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত রবিবার রাত ৯টায় সিলেটের জালালাবাদ থানার জাঙ্গাইল গ্রামের এক সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক লামাকাজী সেতুর টোল ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে চাইলে তাকে টোল আদায়ে থাকা লোকজন থামিয়ে তার কাছ থেকে টোল আদায় করেন। এ সময় ওই ব্যক্তির সাথে টোল আদায়কারী লোকদের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে টোল ফাঁকি দেওয়া সিএনজি চালকের পক্ষ নিয়ে মির্জারগাঁও গ্রামবাসী এবং টোল আদায়কারীদের পক্ষ নিয়ে পাঁচগাঁও (সাঙ্গিরাই, দোকানীপাড়া, কাজিরগাঁও, কেশবপুর ও মোল্লারগাঁও) গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এসময় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষের খবর পেয়ে সিলেট মেট্রো পলিটন পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানার পুলিশ দল ও দাঙা পুলিশ গিয়ে সংঘর্ষ থামাতে বিশ্বনাথ থানা পুলিশকে সহায়তা করে। ৭ রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে লামাকাজী বাজারের প্রায় শতাধিক দোকানপাঠ, দুটি ব্যাংক ভাংচুর ও লুটপাট এবং প্রায় ২০টি যানবাহন ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রায় ৩ ঘন্টা পর সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।