কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দুটি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনির্বাচিত, গণতন্ত্র হরণকারী লুটেরা সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা বেশ কিছুদিন ধরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি, সংলাপ করছি। ইতোমধ্যে একদফা আলোচনা শেষ করেছি। দ্বিতীয় দফায় মূল দাবিগুলো নিয়ে কথা বলছি। ইতোমধ্যে আমরা ১১টি দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আজকে ডেমোক্রেটিক লীগ ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমাদের মূল দাবিগুলো হলো-গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ রাজনৈতিক কারণে যে ৩৫ লাখ মানুষের নামে মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার। সর্বোপরি যেটা প্রধান এই অনির্বাচিত সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার অথবা অন্তর্বতীকালীন দল নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এবং সেই নিরপেক্ষ সরকার একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সেই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সেই সঙ্গে আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত, দুর্নীতি প্রতিরোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা একমত হয়েছি যে এই সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলব এবং তাদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করব।
এ সময় ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব বলেন, বিএনপি দশ দফার একটি কর্মসূচি তৈরি করেছে। আমরা ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে এই আন্দোলনে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছি। আমরা ২০ দলীয় জোটের সৃষ্টি থেকে বিএনপির নেতৃত্বে আছি। বিএনপি কোনো দিন এই দেশের গণমানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। গণতন্ত্রবিরোধী কোনো কর্মসূচি নেয়নি। যার কারণে বিএনপির সৃষ্টি থেকে তাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম আছি। ভবিষ্যতেও থাকব। আমাদের নেতা (মির্জা ফখরুল) যা বলেছেন সবগুলোর সঙ্গে আমরা একমত। এর সঙ্গে শুধু বলব, এই দেশের অত্যন্ত নিরীহ অনেক সিনিয়র আলেম-ওলামাকে সরকার জেলে রেখেছে। আমি আলেম-ওলামাদের মুক্তির বিষয়টা যোগ করছি। আমরা আশা করি এই দেশে এমন গণ আন্দোলন হবে যে, মানুষের অভিশাপের কারণে জালেম সরকারের পতন হবে, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন।
তার বক্তব্যের পর মির্জা ফখরুল বলেন, একটা জিনিস পরিষ্কার করে দেই, অ্যাডভোকেট রকিব সাহেব ১০ দফার কথা বলেছেন। ১০ দফা বলতে এখন পর্যন্ত কিছু নেই। আমরা সব দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারপর দফাগুলো আপনাদের জানাব।
ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি বলেন, আজকে একটা ঐতিহাসিক দিবস। ১৯৯০ সালে আজকের দিনের আগের দিন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠিত হয়। এই দিনে শেখ হাসিনার সোনার ছেলে ছাত্রলীগের মনির নিহত হয়েছিলেন। তার রক্ত নিয়ে কেয়ারটেকার সরকার গঠিত হয়েছিল। আজকে ক্ষমতাসিনরা কেয়ারটেকার সরকারের সঙ্গে বেঈমানি করছে, ছাত্রলীগের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করছে, ছাত্রলীগের রক্তের সঙ্গে শেখ হাসিনা বেঈমানি করছে। তাই আজকে যদি ইতিহাস বলি, ৯০ সালে শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার সরকারের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। সেখানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, যে কোনো ফরমেটে কেয়ারটেকার সরকার হোক, আমরা সেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা ছিলাম। ১৯৯০ সালের এই দিনে স্লোগান উঠেছিল, একদফা এক দাবি এরশাদ তুই কবে যাবি, একদফা এক দাবি, এরশাদ তুই এখন যাবি।
তিনি বলেন, আজকে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে। তার অপরাধ একটাই, সব আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হন। গিনেজ বুকে তার নাম ওঠা উচিত। কারণ পৃথিবীর কোথাও নেই এতো জায়গা থেকে নির্বাচিত হওয়া। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই এবং তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করব। আমাদের কোনো দফা নেই। আমাদের একদফা, এক দাবি, হাসিনা কখন যাবি। যাবে না? এরশাদও বলেছিল কোথায় যাব? কিন্তু পদত্যাগ করতে হয়েছিল। পদত্যাগ তাকে করতেই হবে, এটা আমাদের দাবি।
১২ অক্টোবর থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের প্রত্যাশা জনগণের একটা অভ্যুত্থান হবে। এই সমাবেশগুলোর মধ্যে দিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই আমরা এই সরকারের পতন ঘটাব।
বিএনপি দলীয় এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে, তখন আপনাদের সামনে আসব। তখন দেখতে পাবেন।
সংলাপে বিএনপির পক্ষে আরও অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মওলানা আব্দুর রকিবসহ তার দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম খান, সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান, যুগ্ম-সম্পাদক সামছুল হক, যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান রোকন, প্রচার সম্পাদক আনওয়ার আনসারী, নরসিংদী জেলা সভাপতি নাসির উদ্দীন, কুমিল্লা জেলা সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস রেজা, সদস্য আব্দুল কাদির, মজিবুর রহমান।
ডেমোক্রেটিক লীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহতাজ আহসান, প্রচার সম্পাদক কাউসার আলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ইয়াহিয়া মুন্না, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আল আমিন।