কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ভিত্তিক রূপরেখা দিয়ে বিএনপি যে আন্দোলনের কথা বলছে সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই আন্দোলনে বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না, তাই এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনার কোনো প্রয়োজন নেই বলে সরকার দলীয় নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, গত ১৩ বছরে বিএনপি আন্দোলনের অনেক চেষ্টা করেছে। অনেকবার ডাক দিয়েছে, দেশের জনগণ তাদের কথায় সাড়া দেয়নি। অনেক আগেই আদালতের রায়ে বাতিল হয়ে যাওয়া কোনো বিষয় নিয়ে এখন আন্দোলনের কথা বললে জনগণ তাতে সাড়া দেবে না। এ কারণে বিএনপি যে দাবি দাওয়া ভিত্তিক আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির কথা বলছে এবং তার ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে হুমকি দিচ্ছে সেটাকে গুরুত্বহীন মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপির মূল দাবি। এটাসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়ার ভিত্তিতে বিএনপির আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছে বলে দলটির নেতারা বলে আসছেন। খুব তাড়াতাড়ি এই রূপরেখা প্রকাশ করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাবে বলে তারা বলে আসছেন।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা আরও জানান, অনেক আগেই উচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকার যাই বলা হোক এই ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। চলমান সরকারের ধারাবাহিকতাই অর্থাৎ আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের সব দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সাংবিধানিক এই ধারার বাইরে আওয়ামী লীগ কখনোই যাবে না।
তবে এই দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলনের কথা বলছে সেটার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা হতে পারে বলে সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে যেটা হয়েছিল, সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা হতে পারে বলে তারা জানান। তবে এ ব্যাপারে সরকার ও আওয়ামী লীগ সতর্ক রয়েছে। সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে দেওয়া হবে না। আন্দোলনের নামে যে কোনো পরিস্থিতি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে বলে তারা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তারা বরাবরই আন্দোলনের কথা বলে আসছে, এটা নতুন কোনো কথা নয়। নির্দলীয় সরকারের দাবির কথাই বলুক আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাই বলুক, এটার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন এই সরকারের অধীনেই হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন, সেটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সংবিধানের বাইরে গিয়ে বিএনপি যদি কোনো দাবি করে আন্দোলন করতে চায়, সেটা তো তারা আগেও করেছে ২০১৩, ২০১৪ সালেও করেছে; আমরা আন্দোলন করে সেটা মোকাবিলা করব।
এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির রূপরেখা তৈরি, আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। জনগণ এটা নিয়ে ভাবে না। দেশ সাংবিধানিক ধারায় আছে, সংবিধানের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। বিএনপিকে এটা মেনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং নির্বাচনে আসতে হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এর কোনো ব্যত্যয় হবে না। আন্দোলন করতে হলে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। গত ১৩ বছরে তারা অনেক আন্দোলনের কথা বলেছে, জনগণের কোন সাড়া পায়নি। জনগণ তাদের লুটেরা, সন্ত্রাসী দল হিসেবে মনে করে।
আওয়ামী লীগের লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাচনে সাংবিধানিক ধারায়ই হবে। বিএনপি নির্দলীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাই বলুক এটা তো উচ্চ আদালত বাতিল করে দিয়েছে। সেখানে আর ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের নির্দলীয় সরকারের দাবি হচ্ছে বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার একটা ষড়যন্ত্র। এর জন্য আন্দোলনের রূপরেখা দিক আর যাই করুক, জনগণকে সঙ্গে নিতে পারবে না। যেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই, সেই আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। তারা নয় দফা দিক আর ৯০ দফা দিক, সংবিধানের বাইরে যাওয়া চলবে না।