জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই জনমনে, আ’লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ’লীগ

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে তেমন একটা আগ্রহ নেই। পরোক্ষ ভোটের এই নির্বাচনে বড় ধরনের উত্তাপও ছড়ায়নি। তবে নির্বাচনে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ৩৪টি জেলা পরিষদের মধ্যে অন্তত ২৭টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। কোনও কোনও জেলা পরিষদে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও মাঠে রয়েছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কারণে এসব বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থিতা পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের সুযোগ না থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ দলটির সমর্থিত ২৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। অবশ্য এদের মধ্যে আদালতের আদেশে নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সব পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ফলে বাকি ৩৪টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সব পদে নির্বাচন হচ্ছে। আর ২৮টি জেলা পরিষদে কেবল সদস্য পদের জন্য ভোট হচ্ছে। অবশ্য বেশ কিছু সদস্য পদেও একক প্রার্থী হাওয়ায় সেখানে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না। বিনা ভোটে সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৬৮ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ (৪২টি) জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন কেউ কেউ। পরে অবশ্য বেশ কয়েকজন প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে ২৫টির মতো জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এই বিদ্রোহীদের বিরত রাখতে না পেরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ৩৪টি পরিষদের অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে চেয়ারম্যানসহ অন্য পদগুলোকে জাতীয় পার্টি বা অন্য দলের সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর, শেরপুর, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এদের কেউ কেউ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বর্তমান দলীয় পদে রয়েছেন। কেউ কেউ সহযোগী সংগঠনের পদে আছেন। কেউ বা বর্তমানে কোনও পদে না থাকলেও ইতোপূর্বে দল বা সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অবশ্য বিদ্রোহী এই প্রার্থীদের মধ্যে যারা বর্তমানে পদ-পদবি ধারণ করছেন, তাদের ইতোমধ্যে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রে তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের সমর্থক ও মদতদাতাদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত নেইনি। সব ভোটের ক্ষেত্রে আমাদের দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কার হবেন। ওইসব জায়গায় নতুন করে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হলে সেখানে তারা আর গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারবেন না। এছাড়া ওই প্রার্থীর পক্ষে যে নেতারা থাকবেন, তাদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, তাদের দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না। তাদের প্রাথমিক সদস্যপদ বহাল থাকবে। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে তৃণমূল ব্যবস্থা নিয়েছে।’
দেশের স্থানীয় সরকারের ৫ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেবল জেলা পরিষদ নির্বাচনটি নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়। পরোক্ষ ভোটে অনুষ্ঠেয় এই পরিষদে স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই হচ্ছেন ভোটার (নির্বাচকমণ্ডলী)। তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলার স্থানীয় সরকারের চার ধরনের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) প্রতিষ্ঠানের মোট সংখ্যা ৫ হাজার ২৪০টি। এতে মোট জনপ্রতিনিধি ৬৫ হাজার ৪৯৬ জন। আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারের এসব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই জেলা পরিষদের ভোটার (নির্বাচকমণ্ডলী)। তবে এদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের কোনও প্রতিনিধি সাময়িক বরখাস্ত হলে তিনি ভোটার হতে পারবেন না। ফলে জেলা পরিষদে সারা দেশে মোট ভোটার ৬৫ হাজার ৪৯৬ জন বা তারও কম হবে।
অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ৬১টি জেলার মধ্যে ১২টি সিটি করপোরেশনে মেয়রসহ নির্বাচিত প্রতিনিধি ৬৩৩ জন, ৩১৩টি পৌরসভায় ৫ হাজার ৬২৮ জন, ৪৬৬টি উপজেলা পরিষদে এক হাজার ৩৯৮ জন, ৪ হাজার ৪৪৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ৫৭ হাজার ৮৩৭ জন। এর বাইরে পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে তিনটি পার্বত্য জেলায় মোট জনপ্রতিনিধি এক হাজার ৭৫৫ জন।
তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে আগামী ১৭ অক্টোবর ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে। দেশের ৩৪টি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৯০ জন প্রার্থী, সংরক্ষিত সদস্য পদে মোট প্রার্থী ৬২০ জন, আর সাধারণ পদে এক হাজার ৫০৫ জন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলে তিন পদে মোট দুই হাজার ১২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২১ জন, সাধারণ সদস্য ১৬৬ জন ও সংরক্ষিত সদস্য ৬৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই বছর তিনটি পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৩ হাজার ৯৩৮ জন। অবশ্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, ওই সময় প্রতিটি জেলাকে ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্ত করার কারণে সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংখ্যা বেশি ছিল। কিন্তু আইন সংশোধন করে বর্তমানে জেলার প্রতিটি উপজেলাকে একটি করে সাধারণ ওয়ার্ড ও তার এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্ত হওয়ার কারণে এর সংখ্যা অনেক কমেছে।