বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে দেশে আইন রয়েছে। আইনের কমবেশি প্রয়োগও রয়েছে। অনেক অভিভাবক কিংবা বিয়ে পড়ানোর কাজির শাস্তি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে বাল্যবিবাহের কুফল তুলে ধরে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ রয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে মেয়েরা নিজেরাই দলবদ্ধ হয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধের সফল অভিযান চালিয়েছে। ব্যাপক না হলেও সামাজিক আন্দোলনও আছে। কিন্তু তাতেও কমছে না বাল্যবিবাহের অভিশাপ। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ২৮টি জেলায় দুই হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে ২৮৮ জন কন্যাশিশুর বিয়ে হয়েছে। গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এই তথ্য তুলে ধরেছে।
কম বয়সে বিয়ের ফলে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হয় এটি আজ চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক পরীক্ষিত সত্য। আবার এই কন্যাশিশুরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ না পাওয়ায় তারা নিজেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও জাতি। প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপের ফলাফল থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেড়ে গেছে। গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী মহামারির প্রথম বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে ২৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর মহামারির দ্বিতীয় বছরে বিয়ে হয়েছে ৩৪ শতাংশের। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে ১৩ শতাংশের মতো। আরো অনেক জরিপে উঠে এসেছে এমন ফলাফল, যা আমাদের জন্য শুধু দুঃখজনক নয়, লজ্জাকরও।
মেয়েদের ভবিষ্যৎ ও জীবন ধ্বংসকারী এই কুপ্রথা যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। আমরা মনে করি, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।