জীবনের সবচেয়ে দ্রুততম সংবাদ সম্মেলনে থাকার আফসোস

3

স্পোর্টস ডেস্ক :
পরনে ট্র্যাকসুট। মুখে মুচকি হাসি, সঙ্গী কোচ বা এমন কেউ।
একটু আগেই দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেছেন। দুই উইকেট হারিয়ে দল বিপদে পড়েছিল, এরপর অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌরের সঙ্গে জুটিতে দলকে বাঁচিয়েছেন। কেবল বাঁচানইনি, নিয়ে গিয়েছেন নিরাপদ দূরত্বেও।
ম্যাচটা শেষ অবধি জিতেছে ভারত। সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন জেমাইমা রদ্রিগেজ। কঠিন সময় পাড়ি দিয়ে এসেছেন ক’দিন আগে। জীবনে তার উত্থান-পতনও তো কম না। যখনই একটু ভালো খেলেছেন, ইনজুরি তাকে ছিটকে দিয়েছে। লড়েছেন, আবার ফিরেছেন।
ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতার পর তিনি মন খুলে কথা বলতেই হয়তো এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। কিন্তু রদ্রিগেজের প্রত্যাশার মাত্রা বেশি থাকলে, তিনি শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছেন নিশ্চিতভাবেই। ক্যামেরা এমনিতেও থাকার কথা নয়।
এসিসি (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল) এমনই কড়াকড়ি করছে, সংবাদ সম্মেলনের স্থিরচিত্র অবধি তোলা নিষেধ। তবে জেমাইমার ধাক্কা খাওয়ার কারণ অন্য। এমন দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আসার পর তার অপেক্ষায় কেবল চারজন সাংবাদিক।
জেমাইমা তবুও স্থির হয়ে বসলেন। বলতে শুরু করলেন, অল্প সময়ে মুগ্ধতা উপহার দিলেন। ‘ছয় সপ্তাহ ব্যাট ধরিনি’ স্বীকার করলেন অবলীলায়। এরপর জানালেন কৃতজ্ঞতা।
‘আমি যখন এনসিএতে (ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে ছিলাম, চাঁদনী ম্যাম ছিল, ফিজিও, কোচরা…বাড়িতে আমার বাবা, প্রশান্ত স্যার। আমি যেটা বুঝাতে চাচ্ছি, শুধু আমার কারণে এখানে থাকতে পারছি না, আশেপাশে মানুষ ছিল যারা আমাকে এই জায়গায় পৌঁছাতে ও ভালো করতে সাহায্য করেছে। আমি মনে করি এটা সবার জন্য বিজয় আজকে, আমি কৃতজ্ঞ। ’
এরপরের কথাটাই আসলে রদ্রিগেজকে চেনাতে যথেষ্ট। কতটা দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে লড়েছেন, ফিরে আসার জন্য কেমন অপেক্ষা ছিল তার, সবকিছু বুঝিয়ে যেন ভারতীয় ব্যাটার বলেন লাইনটা, ‘ক্রিকেট আমাকে খেলতেই হতো আসলে…। ’
চার সাংবাদিকের প্রশ্ন-উত্তর শেষ করার আগে রদ্রিগেজের কঠিন দিনগুলোতে ঘুরে আসা যায়। করোনায় যখন পৃথিবী বন্ধ- সতীর্থ স্মৃতি মান্ধানাকে নিয়ে রদ্রিগেজ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন ‘স্ম্যাশ হিট’ ইউটিউব চ্যানেলে। হিউমার ছিল, রঙ ছড়ানোও, তবে মূলে ছিল ক্রিকেট।
রোহিত শর্মা এসেছিলেন তাদের শোতে। তিনি শুনিয়েছেন, প্রথম পাঁচ-ছয় বছরে প্রত্যাশা পূরণের ব্যর্থতা তাকে পুড়িয়েছে কেমন। কীভাবে নিজের চারপাশে তুলেছিলেন অদৃশ্য দেয়াল। পরিবার আর বন্ধুদের কেন ভরসা করেছিলেন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে।
রদ্রিগেজ পরে কথা বলেছিলেন ঋষভ পন্থ ও অন্যান্যদের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, এই আলাপ তাকে সাহায্য করেছে ‘মানসিকভাবে শক্তিশালী’ হতে। এখন আরও বেশি সচেতন ও ভাবনার ব্যাপারে পরিষ্কার থাকেন। দলে পালন করেন সত্যিকারের ‘অ্যাঙ্করের’ ভূমিকা।
টাইমিং তার এমনিতেই ভালো, চোখের সঙ্গে হাতের কম্বিনেশনও। হকির প্রতি জেমাইমার প্রতি অনুরাগ আরও বাড়িয়েছে সেটি। সঙ্গে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও অসাধারণ। সব মিলিয়ে তার জন্য অঙ্কটা মেঁপে রাখা রাখা। দলের প্রতি তার দায়িত্বের সীমারাখা জানেন, কাজ করেন ওই অনুযায়ী।
জেমিমা জানেন, ‘তিনি পাওয়ার হিটার নন, প্লেসার…’। গ্যাপ বের করে এক-দু রান নিতে সিদ্ধহস্ত। তবুও অনুশীলনে পাওয়ার হিটিং অনুশীলন করেন, তবে তার কাছে সবচেয়ে জরুরি নিজের খেলাটাকে বুঝতে পারা।
জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার বহু আগে থেকেই জেমাইমার বন্ধু-সতীর্থ স্মৃতি মান্ধানা। ২০১৯ আইপিএলের সময় ভারতের নারী ক্রিকেট তারকা তাকে বলেছিলেন, ‘স্মৃতি কিংবা হারমানপ্রিত নয়, তোমাকে হতে হবে জেমাইমা রদ্রিগেজ। ’ তিনি হতে চান সেটিই।
আবার সংবাদ সম্মেলনে ফিরে আসি। আফসোসের কারণটাও বলা জরুরি। আগে চার সাংবাদিক, পাঁচ প্রশ্ন আর তিন মিনিটের সংবাদ সম্মেলনে জেমাইমার বলা শেষ তিন লাইন পড়ুন, ‘গরম কিংবা ঠাণ্ডায় আমাদের কিছু যায়-আসে না। লক্ষ্য ছিল টিম ইন্ডিয়া পুরো টুর্নামেন্টে কী করবে সেটা দেখানো। দেখাতে পেরে আমরা আনন্দিত। ’
কথাটা বলে এদিক-ওদিক তাকালেন জেমাইমা। ‘আর প্রশ্ন নেই…?’ ভঙ্গীটা এমন। সাংবাদিকরা বললেন, ‘থেংক ইউ’। জেমিমা উঠলেন, হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে দ্রুততম সংবাদ সম্মেলন…’। আফসোস হলো, সঙ্গে আনন্দও; ভালো-মন্দের বিচার পরে, অন্তত কিছু একটার তো সাক্ষী হওয়া গেল!