কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগসহ অন্তত ১০-১১টি রাজনৈতিক দাবি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এসব দাবিকে ‘যুগপৎ আন্দোলনের’র রূপরেখা হিসেবে কেন্দ্রে রেখে সরকার পতনের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা শুরু করছে দলটি। আগামী ২ অক্টোবর থেকে দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে বিএনপি। এ আলোচনায় অন্তত ১০ থেকে ১১টি রাজনৈতিক ইস্যু জায়গা পাবে। বিএনপির উচ্চ পর্যায় ও বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনাকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে আসতে চায় বিএনপি। আলোচনায় অন্তত ১০-১১টি বিষয়কে কেন্দ্রে রেখে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফা আলোচনার পর এই রূপরেখা চূড়ান্ত করে জাতির সামনে তুলে ধরবে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো।
বিরোধী দলগুলোর কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা তাদের কাছেও পৌঁছেছে। এসব রূপরেখায় এখন পর্যন্ত ৮-৯টি ইস্যু উল্লেখ করা আছে। একইসঙ্গে আরও ২-৩টি দাবি সমন্বিত করে রূপরেখাটি ১০ বা ১১ দফায় চূড়ান্ত হতে পারে। এসব রূপরেখায় সরকারের পদত্যাগের দাবি করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইবে বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলো।
রূপরেখায় উল্লেখিত ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম বাতিল, আরপিও সংশোধন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি, বিদ্যুতের সংকট, শেয়ার বাজার, ব্যাংক লুটপাট, বেগম খালেদা জিয়া ও রাজনৈতিক বন্দিদের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি, ডিজিটাল আইন, ১৯৭৪ সালে তৈরি কিছু আইন বাতিল, ১৫ বছরে সংঘটিত গুম-খুনের বিচারের বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য।
বিএনপির রূপরেখার কাজে সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে স্পষ্ট, নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠনে সক্ষম হলে বিএনপি ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করবে। আর এই সরকার কী কী রাজনৈতিক অঙ্গীকার করবে, তা ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’ হিসেবে প্রস্তুত হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক্ষেত্রে বিস্তারিত রূপরেখা প্রস্তুতের কাজ চলছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে।
স্থায়ী কমিটির সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি আগে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা দেবে এবং জাতির সামনে ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’ হাজির করবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা শিগগিরই আসবে। খুব তাড়াতাড়ি।’
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে নানা ইস্যুতে মাঠে সক্রিয় থাকা বিএনপি দাবি আদায় পর্যন্ত রাজপথে কর্মসূচির মধ্যেই থাকবে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, পাঁচ নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আগামী ৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করবে তারা।
ডিসেম্বরের পর রাজপথে আবারও নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি, এমন তথ্য জানিয়ে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের পরই জানুয়ারি। নতুন বছরের প্রথম থেকেই বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে যুগপৎ কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, সময়সীমা দিয়ে তো আন্দোলন শুরু করা যায় না। আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রোগ্রামে আছি। এরপর বলা যাবে নতুন কী কর্মসূচি আসবে। স্থায়ী কমিটিতে এ নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।
বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, আগামী ২ অক্টোবর সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে আলোচনা করবেন বিএনপি নেতারা। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সেদিন সকাল ১১টায় বৈঠকটি শুরু হবে বলে জানান শায়রুল কবির খান।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, চলতি বছরের ২৪ মে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বিএনপি মতবিনিময় শুরু করে তাদের অফিসে গিয়ে। এবার সব দলকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনার এখনও দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। এবারের আলোচনা হবে এজেন্ডাভিত্তিক। ইতোমধ্যে আমাদের আলোচনায় এসব বিষয় এসেছে। এখন পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত করার সময় এসেছে। ইতোমধ্যে আন্দোলনের রাজনৈতিক রূপরেখা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক কথা চলছে। এটা হবে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার রূপরেখা। এরপর আমরা আলোচনা করবো রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে। এগুলো সময়সাপেক্ষ বিষয়, আগে হবে মুভমেন্ট।’