স্টাফ রিপোর্টার :
নগরী থেকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ (হিজড়া) পরিচয় দেওয়া একজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে সোবহানীঘাট এলাকা থেকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ এ লাশটি উদ্ধার করে।
নিহত হিজড়া তুষার আহমদ (২০) ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার শ্যামগঞ্জ বাজার গ্রামের আবুল হাসেমের পুত্র। তিনি নগরীর এয়ারপোর্ট থানার খাসদবির এলাকার তরঙ্গ-৩৮-এ থাকতেন। তাকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এসএমপি পুলিশ জানায়, গতকাল রবিবার ৯টার দিকে সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির খবরের ভিত্তিতে সোবহানীঘাটস্থ বনফুল এন্ড কোম্পানির দোকানের ২য় তলায় উঠার সিঁড়ির সামনে (নিচ তলায়) তুষারের মৃতদেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর লাশ ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এর আগে তুষারের মা নাছিমা বেগম তার লাশ শনাক্ত করেন।
মৃতের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়- তুষার নিজেকে ৩য় লিঙ্গের মানুষ পরিচয় দিতেন এবং সেই বেশে থাকতে পছন্দ করতেন।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, প্রাথামিকভাবে আমরা ধারণা করছি এটি একটি হত্যাকাণ্ড। কারণ তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তুষার আহমদ (২০) প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থায়ই নিজেকে নারী সাজে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। চলাফেরা করতেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতো। প্রাইমারি শেষে তার পড়ালেখা আর এগুয়নি। পরিবার থেকে নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও মাধ্যমিকে ভর্তি করা যায়নি তুষারকে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে তার চলাফেরা। একপর্যায়ে প্রায় প্রতি রাতেই হিজড়াদের মতো করে নিজেকে সাজিয়ে তার হিজড়া বন্ধুদের সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে তুষার।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এভাবে তার এক হিজড়া বন্ধু তাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে তুষারের লাশ মিলে নগরীর সোবহানীঘাটে বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির দোকানের পাশে।
এসব কথা জানান তুষারের বড় ভাই হিমেল আহমদ রাফি। রবিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি বলেন- ময়না তদন্ত শেষে এই মুহুর্তে আমরা তুষারের লাশ দাফনের জন্য নগরীর মানিকপির টিলায় নিয়ে এসেছি। দাফন শেষে আমরা হত্যা মামলা দায়ের করবো।
এদিকে, বিকেল ৪টার দিকে নগরীর মানিকপীর টিলায় তুষারের লাশ দাফন করেন তার পরিবারের সদস্যরা। দাফনের আগে কেঁদে কেঁদে তুষারের ভাই হিমেল বলেন- আমরা ভাই হিজড়া নয়। ছোটবেলায় একসঙ্গে আমাদের খতনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাসদবির প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় সে অদ্ভূত আচরণ করতে থাকে এবং একসময় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করতে থাকে।
তিনি জানান- প্রায় প্রতিদিন রাতই তুষার তার হিজড়া বন্ধুদের সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ফিরে পরদিন সকালে। এ ব্যাপারে তাকে বার বার নিষেধ করেও কথা মানানো যায়নি। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকেও এভাবে তার এক হিজড়া বন্ধু তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তবে ওই হিজড়াকে আমি কখনো তার সঙ্গে দেখিনি। রাতে ওই হিজড়ার সঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে আর রাতে ঘরে ফেরেনি তুষার। সকালেই জানতে পারি তার লাশ সোবহানীঘাটের ওই জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
দাফন কাজ শেষে মামলা দায়ের করবেন জানিয়ে হিমেল বলেন- আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিকে খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য পুলিশের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।