দেশে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তো বটেই; সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও একের পর এক আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের গত ৩০ আগস্টের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলেও দেশের বাজারে সেসব পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে।
তাহলে এ দেশে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষিত হবে কিভাবে?
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে চলতি বছরের ২৮ আগস্টের সঙ্গে গত বছরের একই দিনের নিত্যপণ্যের দামের তুলনা করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে মসুর ডালের দাম কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে দেশের বাজারে গড়ে এই ডালের দাম বেড়েছে ৩৮.৭১ শতাংশ। এই ডাল আমদানিতে কোনো শুল্কও দিতে হয় না। একইভাবে বিশ্ববাজারে এক বছরে চিনির দাম কমেছে ১০.৭৮ শতাংশ। কিন্তু স্থানীয় বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি, বরং দাম বেড়েছে ১৪.৮৪ শতাংশ। গত রবিবার স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকায়। এক বছর আগে চিনির দাম ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এক বছরে বিশ্ববাজারে রডের দাম কমেছে ১৪.২৯ শতাংশ, কিন্তু স্থানীয় বাজারে দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। কিছু পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে যে পরিমাণ বেড়েছে, দেশের বাজারে বেড়েছে তার কয়েক গুণ। যেমন বিশ্ববাজারে চালের দাম গড়পড়তা বেড়েছে ৬.৮৬ থেকে ৭.২১ শতাংশ। আর স্থানীয় বাজারে বেড়েছে ১৩ থেকে ১৯ শতাংশ। আটার দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে ৮ শতাংশ, আর স্থানীয় বাজারে বেড়েছে ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত। এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে মূল্যবৃদ্ধি পেলেও তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ খুব কমই লক্ষ করা যায়।
যুগের প্রয়োজনে দেশে এখন সুপারশপ সংস্কৃতি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অভিযোগ আছে, বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে সুপারশপগুলোও বড় ভূমিকা পালন করছে। এগুলোতে চাল থেকে শুরু করে মুড়িমুড়কি পর্যন্ত অনেক পণ্যই প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। বাজারের তুলনায় সেগুলোর অনেক বেশি দাম রাখা হয়। এভাবে সুপারশপে বেশি দাম রাখার প্রভাব খোলা বাজারেও পড়ে এবং দাম বেড়ে যায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তার প্রভাবে জ্বালানি তেলসহ আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আবার কিছু পণ্যের দাম বেড়ে আবার কমেছেও। কিন্তু যখন যুদ্ধ শুরু হয়নি তখনো যেমন দাম বেড়েছে, এখনো বাড়ছে। সাধারণ মানুষ আন্তর্জাতিক বাজারের খবর কমই রাখে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে, তারা কী করছে? তারা কেন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে যৌক্তিকভাবে দেশের বাজারে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে না? আমরা মনে করি, এই কাজটি খুব দ্রুত করতে হবে।