কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তি বজায় রাখায় তার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, এটা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যে, বাংলাদেশ সর্বদা বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে। শান্তি সহায়তা কার্যক্রমে মহান অবদানের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। জাতিসংঘের অধীনে বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সেনাবাহিনী প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা এটি বজায় রাখতে চাই।
সোমবার রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে ৪৬তম ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মিজ ম্যানেজমেন্ট সেমিনার (আইপিএএমএস)-২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছে। ২৭টি দেশ এতে অংশগ্রহণ করছে। অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ মিশনে এবং বিশ্বের যে কোন স্থানে দেশ ও বিশ্ব শান্তির জন্য সর্বদা প্রস্তুত। তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমান বিশ্বে নিরাপত্তা গতিশীলতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং দিন দিন জটিল হচ্ছে। যে কোন সংঘাত বা সঙ্কট বিশ্বের প্রতিটি জাতিকে প্রভাবিত করে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, এটি রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল উন্নয়নকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুপাক্ষিকতাবাদে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার প্রথম ভাষণে তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সারমর্ম উচ্চারণ করেছিলেন- ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়।’ তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিশ্ব নেতাদের সৎ ও শান্তিপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সর্বদা আমাদের বৈদেশিক নীতি থেকে শক্তি নিয়ে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছি। এটি আমাদের একটি জাতি হিসেবে বেড়ে উঠতে দিয়েছে এবং ধীরে ধীরে আমাদের সম্প্রদায়ে আমাদের সঠিক অবস্থান দাবি করার ক্ষমতা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের প্রধান নীতিগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সহযোগিতার দিকে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এটি যোগাযোগ, সংলাপ এবং শীর্ষ সম্মেলনের মতো বেসামরিক এবং সামরিক কূটনৈতিক চ্যানেলের পথও প্রশস্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দেখতে পাচ্ছেন যে, আইপিএএমএস একটি অনুরূপ বহুজাতিক প্ল্যাটফর্ম বন্ধুত্ব এবং উষ্ণতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে যাতে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বন্ধুত্ব, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আইপিএএমএস সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তা পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই ফোরামের মাধ্যমে মিথষ্ক্রিয়া বাস্তবসম্মত বহুপার্শ্বিক পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অভিন্ন স্বার্থের বিষয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের কারণে দেশের স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমারের নাগরিকদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় বাংলাদেশে এই সেমিনারে যোগদানের জন্য সমস্ত অংশগ্রহণকারী দেশকে ধন্যবাদ জানান এবং বিশ্বাস করেন যে, এই ধরনের ফোরামের মাধ্যমে সিনিয়র সামরিক নেতাদের অবশ্যই কথা বলতে হবে, যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, যে কোন দেশের সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার অন্যতম উপাদান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছে। স্বাধীনতার ৫১তম বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ এবং গত ৫০ বছরে দেশটির আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি এখন আমাদের সাফল্যের জন্য একটি উন্নয়ন বিস্ময় হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক স্বীকৃত, বিশেষ করে দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য স্বনির্ভরতা ও সুরক্ষা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জেন্ডার সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে, কারণ, আমরা শান্তির সুবিধাগুলোতে বিশ্বাস করি এবং আমরা আমাদের জনগণের শক্তির দিকে মনোনিবেশ করেছি।
সরকার প্রধান আরও বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে উন্নত দেশ পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। এটি আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যে বাংলাদেশ সব সময় বিশ্ব শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে। জাতিসংঘের অধীনে বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সেনাবাহিনী প্রধান ভূমিকা পালন করে আসছে, আমরা এটি অব্যাহত রাখতে চাই।