স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় চারিকাটা হাই স্কুলের ১০ শ্রেণীর ছাত্র পলক কুমার রাউৎ হত্যা মামলায় তার এক সহপাঠিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া এ রায় ঘোষনা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম, স্বপন বিশ্বাস (২৭)। সে জৈন্তাপুর থানার বাউরভাগ উত্তর গ্রামের দুলু বিশ্বাসের পুত্র। গতকাল রায় ঘোষনার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী স্বপন বিশ্বাস আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন না।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে স্কুল থেকে পলক কুমার রাউৎ (১৬) বাড়ি ফিরে না আসায় তার মোবাইলফোনে কল করা হলে সে তার পরিবারকে জানায় সে দাঁতের ব্যথার ওষুধ আনতে জৈন্তাপুরের সারিঘাট যাচ্ছে। সেখান থেকে ফিরে না আসায় আবার তার পরিবার তার মোবাইলে কল দিলে তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া য়ায়। পরে তার পরিবাবর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরদিন ১১ ডিসেম্বর জৈন্তাপুর থানায় ৩৯৩ নং একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ জিডির তদন্ত করে ১৭ ডিসেম্বর রাত সোয়া ২ টার দিকে বাউরবাগ উত্তর গ্রামের স্কুল ছাত্র পলক কুমার রাউৎ এর সহপাঠি সফিক আহমদের পুত্র আব্দুল কুদ্দুছ (১৬) ও তার সৎভাই আব্দুল জব্বার সাবু এবং স্বপন বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, কুদ্দুছের সাথে তার ভাগনী রুমা (১৫)’র প্রেমের সম্পর্কের কথা পুলক কুমার রাউৎ এলাকার লোক জনদেরকে জানালে এ নিয়ে কুদ্দুছ ও রুমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষোভে কুদ্দুছ, আব্দুল জব্বার সাবু ও স্বপন বিশ্বাসকে নিয়ে পুলক কুমারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১০ ডিসেম্বর পলক কুমার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার পথরোধ করে আব্দুল কুদ্দুছ, আব্দুল জব্বার সাবু ও স্বপন বিশ্বাস মিলে জৈন্তাপুর থানার পাখি টেকি হাওরের বড় ভূইয়া ফিসারীর দক্ষিণ পূর্ব দিকে তাকে নিয়ে যায়। সেখানে ৩ সহপাঠি আব্দুল কুদ্দুছ, আব্দুল জব্বার সাবু ও স্বপন বিশ্বাস (২০) মিলে পালকের গলা চেপে ধরে ও ট্রাউজারের ফিতা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধে হত্যা করে। পরে তারা ৩ জন মিলে পলকের লাশ ওই হাওরের নিয়ে যায় এবং লাশটি কচুরীপানা দিয়ে ঢেকে রাখার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। পরে ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ হত্যাকারী ৩ জনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় এবং তাদের দেখানো মতে পলকের গলিত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহত পলকের পিতা শ্রী পান্না লাল রাউৎ বাদি হয়ে ‘হত্যা করে লাশ গুম করার অপরাধ’ এনে জৈন্তাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৭ (১৮-১২-২০১৫)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে জৈন্তাপুর থানার এসআই মিন্টু চৌধুরী তাদের বিরুদ্ধে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০১৬ সালের ৯ জুন থেকে আদালতে এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল রবিবার আদালত আসামী স্বপন বিশ্বাসকে ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। অপর আসামী আব্দুল কুদ্দুছ ও আব্দুল জব্বার সাবু আইনের বিধান অনুয়ায়ী বয়স কম হওয়ায় সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার কার্য্যক্রম চলমান রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট এসএম পারভীন ও স্টেট ডিফেন্স এডভোকেট ফারজানা হাবিব চৌধুরী মামলাটি পরিচালনা করেন।