চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে গত জুনে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভায় বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য ৩২৯ প্রতিষ্ঠানকে অনুমতিও দিয়েছিল সরকার। আমদানি শুল্কও কমিয়ে দেওয়া হয়। সরকারও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত বুধবার মিয়ানমার থেকে দুই লাখ টন আতপ চাল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। কিন্তু প্রতি টন চালের যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের করা প্রতিবেদনে খাদ্যশস্যের সম্ভাব্য আমদানির যে মূল্য দেখানো হয়েছে, তাতে দেখা যায়, ভারত থেকে এক টন চাল আমদানি করে দেশের বন্দরে আনতে খরচ পড়বে ৩৭৩ ডলার, থাইল্যান্ড থেকে ৪৪৬ ডলার, ভিয়েতনাম থেকে ৪১৬ ডলার এবং পাকিস্তান থেকে ৪১০ ডলার।
বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের চাল আমদানি করার কোনো বিকল্প নেই। বাজারে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের চাল আমদানি করতেই হবে। নিজস্ব মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজার অস্থির করে তুলতে পারে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা একেবারেই সুখকর নয়। প্রতিবছর ধানের মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়। দেশের রাইস মিলগুলো থেকেও সরকার চাল কিনে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, অনেক সময় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই দেশের বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। আবার সরকারের মজুদ কমে গেলে চালের বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। তখন আবার চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে একটি সিন্ডিকেট কাজ করে বলেও অভিযোগ আছে।
স্বাভাবিকভাবেই চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানি করতে হবে। কিন্তু সরকার নিজেই যখন কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছে, সাশ্রয়ী হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে, তখন মিয়ানমার থেকে বেশি দামে চাল আনার কারণ কী?
সরকারের যুক্তি বোধ হয় এটাই যে দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি হওয়া চালের বাজারমূল্যের চেয়ে মিয়ানমারের এই দাম কিছুটা কম। কিন্তু যখন অন্যান্য দেশে এর চেয়ে অনেক কম দামে চাল পাওয়া যাচ্ছে, তখন কেন বেশি দামে কিনতে হবে। কেন আমরা কেনাকাটার ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হব না? যখন অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশে কম দামে চাল পাওয়া যাচ্ছে, তখন কেন বেশি দামে চাল কিনতে হবে?