কাজিরবাজার ডেস্ক :
১৫০ সংসদীয় আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রকল্পে ভোটযন্ত্রগুলো সংরক্ষণের জন্য ওয়্যাহাউজের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।
তবে এতে প্রকল্পের আকার হয়ে যেতে পারে দ্বিগুণ।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নেওয়া ইভিএম প্রকল্পে মেশিনগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে সেগুলো রাখা হয় স্কুল-কলেজ কিংবা ভাড়া বাড়িতে। এতে অনেক মেশিন নষ্ট ও চুরি হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ইভিএম একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আদ্রতায় রাখতে হয়। অন্যথায় এই মেশিনের স্থায়িত্বও কমে যায়।
বর্তমানে ইসির হাতে দেড় লাখ ইভিএম আছে। মেশিনগুলোর হার্ডওয়্যার বিদেশ থেকে আমদানি করে প্রস্তুত করে দিয়েছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। আর নতুন প্রকল্পে দুই লাখ ইভিএম কেনার কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে সংরক্ষণের সংকট আরো তীব্র হবে। সেই ভাবনা থেকেই নতুন প্রকল্পে ১০টি অঞ্চলে ১০ ওয়্যার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা প্রকল্পেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বর্তমানে যে ইভিএমগুলো আছে, সেগুলোর প্রতিটির দাম পড়েছে দুই লাখ ৫ হাজার টাকা। সেই দর ধরলেও নতুন প্রকল্পের কেবল মেশিন কিনতে চার হাজার ১শ কোটি টাকার প্রয়োজন। এছাড়া ওয়্যারহাউজ, ভূমি অধিগ্রহণ, নিরাপত্তাকর্মী, ট্রান্সপার্ট ইত্যাদি ব্যয় যোগ হলে নতুন প্রকল্পের আকার দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, সাড়ে ২১ হাজার স্কয়ার ফিটের ওয়্যারহাউজ লাগবে। সেভাবে ওয়্যারহাউজ চিন্তা করছি। তবে সিদ্ধান্ত পৌঁছায়নি। ওয়্যারহাউজ পেন্ডিং, ট্রান্সপোর্টেশন ও নির্ধারণ হয়নি।
আগে দেড় লাখ ইভিএমের জন্য তিন হাজার ৮শ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এবার আমাদের দুই লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প নেওয়া হবে। এছাড়া ওয়্যারহাউজ, জনবল ও অন্যান্য বিষয় আছে। আগের প্রকল্পে একটি ইভিএম কেনা হয়েছিল ২ লাখ ৫ হাজার টাকার। এখন ডলারের একটা বিষয় আছে। সেই হিসাবে প্রকল্পের আকার দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, বিএমটিএফের ক্যাপাসিটি আছে। এই মাসের মধ্যেই আমরা প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়ে দেবো। যত তাড়াতাড়ি অনুমোদন হবে, তত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন হবে। আর অনুমোদন যত দেরিতে হবে, তত টাফ হবে।
১০টা অঞ্চলে ১০টা ওয়্যারহাউজ, ভূমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামো ব্যয়সগুলো মিলে প্রাইসটা আসবে। এছাড়া ট্রেনিংয়ের বিষয় আছে। মূল কথা হলো একটা ভালো প্রকল্প যেন প্রস্তাব করা যায়, একটা টেকসই ব্যবস্থার জন্য যা করার দরকার আমরা সেভাবে প্রস্তাব করছি। নতুন প্রকল্পের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।
কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একইসঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানে ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সিদ্ধান্তের আলোকে কেএম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে অধিকতর উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেয়। নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় নির্বাচন কমিশন। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ছয়টি আসনে) ও অন্যান্য উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই মেশিন ব্যবহার করে বিগত কমিশন। বর্তমানে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ইভিএমের ব্যবহার আরো বাড়াতে চায়। এক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনের মতো তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।