স্পোর্টস ডেস্ক :
এবারের এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই চমক দেখালো আফগানিস্তান। অপেক্ষাকৃত শক্তিধর শ্রীলঙ্কাকে মাঠের লড়াইয়ে পাত্তাই দিলো না মোহাম্মদ নাবির দল।
দুবাইয়ে চলতি আসরের প্রথম ম্যাচটি আফগানরা জিতেছে ৮ উইকেট হাতে রেখেই। যে জয় পেতে তাদের খেলতে হয়েছে মাত্র ৬১ বল।
বোলাররাই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন। ১০৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে হজরতউল্লাহ জাজাই আর রহমানুল্লাহ গুরবাজের ওপেনিং জুটিতে ৮৩ রান পেয়ে যায় আফগানিস্তান।
গুরবাজ ১৮ বলে ৩ চার আর ৪ ছক্কায় ৪০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হলে ভাঙে জুটি। দল যখন জয় থেকে মাত্র ৩ রান দূরে, ইব্রাহিম জাদরান ১৩ বলে ১৫ করে রানআউটের ফাঁদে পড়েন।
তবে জাজাই বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছেড়েছেন। ২৮ বলে ৫ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সঙ্গে ২ রানে ছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান।
এর আগে ইনিংসের ২ বল বাকি থাকতে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। রানটা আরও কম হতে পারতো। ৭৫ রানেই যে শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন আফগান বোলাররা। শেষ উইকেটে দিলশান মধুশঙ্কাকে নিয়ে চামিকা করুনারত্নে ৩০ রানের লড়াকু এক জুটি গড়েন। যে জুটিতে মধুশঙ্কার অবদান মাত্র ১ রান।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নাবি। তার এই সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করতেই যেন উঠেপড়ে লাগেন আফগানিস্তানের বোলাররা।
প্রথম ওভারেই তোপ দাগেন আফগানদের পেস আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্র ফজলহক ফারুকি। বাঁহাতি এই পেসার ওভারের পঞ্চম আর ষষ্ঠ বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন কুশল মেন্ডিস (২) আর চারিথ আসালাঙ্কাকে (০)। এর মধ্যে কুশলের আউটটিতে আম্পায়ার আঙুল না তুললে রিভিউ নিয়ে জেতে আফগানিস্তান। সেই ধাক্কার মাঝেই পরের ওভারে আরও এক উইকেট হারায় লঙ্কানরা। নাভিন উল হকের লেগকাটার না বুঝেই মিডঅনে খেলতে চেয়ে উইকেটের পেছনে এজ হন পাথুম নিশাঙ্কা (৩)। ৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
ফজলহক ফারুকি নিজের দ্বিতীয় আর লঙ্কান ইনিংসের তৃতীয় ওভারটি দেন মেইডেন। ফলে প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ৫ রান তুলতে পারে শ্রীলঙ্কা।
সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে চতুর্থ ওভারে নাভিন উল হকের ওপর চড়াও হন ভানুকা রাজাপাকসে আর দানুশকা গুনাথিলাকা। রাজাপাকসের ছক্কা আর গুনাথিলাকার বাউন্ডারিতে ওই ওভারে ১৩ রান তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।
পঞ্চম ওভারে মুজিব উর রহমান দেন মাত্র ৩ রান। তবে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের করা পরের ওভারেই দুটি করে ৪টি চার মেরে ২০ রান তুলে নেন রাজাপাকসে আর গুনাথিলাকা। তাতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৪১ রান পায় লঙ্কানরা।
৩১ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়েন রাজাপাকসে আর গুনাথিলাকা। কিন্তু দলের রান পঞ্চাশ ছুঁতেই ভুল করে বসেন ধীরগতির গুনাথিলাকা। মুজিব উর রহমানকে রিভার্স সুইপ খেলে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ হন ১৭ বলে ১৭ করা এই ব্যাটার।
ইনিংসের দশম ওভারে আফগান অফস্পিনারের দ্বিতীয় শিকার হাসারাঙ্গা। ৮ বলে মাত্র ২ রান করে মিডঅফে নাবির হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই অলরাউন্ডার। ৬০ রানে ৫ উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
পরের ওভারে নাবির বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন অধিনায়ক দাসুন শানাকাও (০)। শ্রীলঙ্কার বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন শেষ সেখানেই।
নাবির করা ইনিংসের ১৩তম ওভারে টানা দুই বলে দুই রানআউট শেষ আশাটাও শেষ করে দিয়েছে লঙ্কানদের। ২৯ বলে ৩৮ করে ভানুকা রাজাপাকসে ফেরার পর মাহিশ থিকশানাও রানআউট হন না বুঝেই রান নিতে গিয়ে।
৭৫ রানে ৯ উইকেট হারানো লঙ্কানদের এরপর একাই টেনে নিয়েছেন লোয়ার অর্ডারের চামিকা করুনারত্নে। ইনিংসের শেষ ওভারে এসে ফারুকির বলে বোল্ড হন এই ব্যাটার, ৩৮ বলে করেন ৩১ রান।
আফগান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ফারুকিই। মাত্র ১১ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন বাঁহাতি এই পেসার। দুটি করে উইকেট মোহাম্মদ নাবি আর মুজিব উর রহমানের।