১৫০ আসনে ইভিএম, নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ইসি

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের লক্ষ্যে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে আগামী নভেম্বরের মধ্যেই ক্রয় প্রকিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি ষষ্ঠতম কমিশন বৈঠকে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৫০টি আসনে মেশিনটি ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েই প্রস্তুত থাকতে চাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় ধরনের কেনাকাটা আছে। এ বিষয়ে যা করণীয় আছে প্রত্যেকটা লেবেলে যোগাযোগের পর তা করে ফেলবো তাড়াতাড়ি। আগামী দুই মাসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলবো, যাতে তিন মাসের মধ্যে কেনাকাটা শুরু হয়।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আমরা প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়ে দেবো, যে সব জায়গায় অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে। অনুমোদন হলে কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু হবে, এমনটা আশা করতে পারি। এবারও আগের মতো বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকেই ইভিএম কেনা হবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিএমটিএফ এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। মেশিনগুলো ধাপে ধাপে পাবো। তারপর আস্তে আস্তে মাঠ পর্যায়ে পাঠাবো। ৩০টি জেলায় বাসাবাড়ি বাড়া করে সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। অন্যান্য জায়গায় মাঠ পর্যায়ে রাখা হয়েছে। বিএমটিএফেও আছেও। নতুনগুলোও কিছু থাকবে। নতুন প্রজেক্টে ওয়্যারহাউজ তৈরির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। না হলে বিকল্প পন্থায় যাবো।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএম আছে। নষ্টের পরিমাণ জানার জন্য মাঠ পর্যায়ে চিঠি দিয়েছি। তারা তথ্য পাঠাচ্ছে। যেহেতু পাঁচ বছর হয়েছে, আমরা দশ শতাংশ নষ্ট ধরতে পারি। যেসব মেশিন অচল বা নষ্ট হয়েছে, সে ধরনের হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে চুক্তি আছে তাতে সচল করে দেবে বিএমটিএফ। সংরক্ষণ করাটা চ্যালেঞ্জ। সেটা মাঠ পর্যায়ে সেভাবে ওভারকাম করা হয়নি। তবে সচিবালয় চেষ্টা করে যাচ্ছে। মাঠ কর্মকর্তারাও যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। বিএমটিএফ-এর স্টোরেজটা স্ট্যান্ডার্ড। সেভাবে আমরা ওয়্যারহাউজ করার চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এগুচ্ছি, যেন মাঠ পর্যায়ে রাখা যায়।
নতুন প্রজেক্ট নিলে ব্যয় বাড়তে পারে দ্বিগুণ, এমনটাই বলছেন অনেকে। তবে প্রকল্প্ পরিচালক এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, আগের প্রজেক্ট ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ছিল। এটা তো পাঁচ বছর আগের ছিল। ইভিএমে কেনাসহ অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছিল এ প্রকল্পে। এবার কিছু তারতম্য হবে। মোট খরচ নির্ধারণ করতে পারিনি। সেপ্টেম্বরে হয়তো বলতে পারবো। এখনো কাজ করছি। কত ইভিএম লাগবে এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় আছে, সেগুলো নিয়ে সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব হয় না। নতুন প্রকল্পে যে ইভিএমগুলো আসবে এতে নতুন করে কোনো সংযোগ হচ্ছে না। এটা পারফেক্ট মেশিন। এটার মধ্যে সংযোগ-বিয়োজনের প্রয়োজন নেই বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক।
কত সংখ্যাক ইভিএম কেনা হতে পারে তার ধারণাও তিনি দিতে পারেননি। সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, ১৫০ আসনে বলতে মোট কত ভোটারের জন্য ইভিএম ব্যবহার করা হবে তার ওপর নির্ভর করবে মেশিন কতটি লাগবে। সব আসনে ভোটার সংখ্যা সমান নয়। তাই এই বিষয় নিয়ে কাজ করছে সচিবালয়। শিগগিরই হয়তো বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএম আছে। সক্ষমতা আছে ৭০ থেকে ৮০টা আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করার। ১৫০টি আসনের জন্য আনুমানিক আরও প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ ইভিএম কিনতে হবে। বিদেশি কোম্পানি কত দাম চায়, প্রশিক্ষণের বিষয় আছে, ওই সময় ডলারের দাম কত থাকবে এসব বিষয় নিয়ে প্রকল্প নেওয়া হবে।
২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।
কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একইসঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানে ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সিদ্ধান্তের আলোকে কেএম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে অধিকতর উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেয়। নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় নির্বাচন কমিশন।
এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ছয়টি আসনে) ও অন্যান্য উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই মেশিন ব্যবহার করে বিগত কমিশন।
বর্তমানে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ইভিএমের ব্যবহার আরও বাড়াতে চায়। এক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনের মতো তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।