মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
এখনো ধর্মঘটে দেশের অধিকাংশই চা শ্রমিকের একাংশ। যদিও সাধারণ চা শ্রমিকরা এখন তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিশ্বাস করছেন না। শ্রমিকদের কথা নেতারা প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করছেন এমনটাই অভিযোগ। আবার শ্রমিকদের সমর্থন দিয়েছে পঞ্চায়েত ও ভ্যালি কমিটি।
দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে টানা ১৬ দিনের চলমান ধর্মঘটের ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার লছনা নামক এলাকায় অবরোধ করেছেন চা শ্রমিকেরা।
গতকাল বুধবার বিকাল ৩টা থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার লছনা নামক এলাকার সাতগাঁও চা বাগানের ফ্যাক্টরীর সামনের তাঁরা বিকাল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান নেন। তার আগে শ্রমিকরা বাগানের নাটমন্দিরে বসে বিক্ষোভ করছেন। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেন সাতগাঁও চা বাগান, দিনারপুর, মির্জাপুর, ক্লোনেল, সাইফ, ইছামতি, মাকড়িছড়াসহ বিভিন্ন চা বাগানের শত শত নারী চা শ্রমিক সড়কে অবস্থান নিয়ে দূর পাল্লার যানবাহনসহ সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেন তাঁরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে চরম দূভোর্গে যাত্রীরা।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানে মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলা জেরিন চা বাগান ও ফিনলে টি কম্পানির একটি বাগানে কাজ শুরু হলেও পরে তাঁরা কাজ বন্ধ করে ঘরে চলা যায়।
অপরদিকে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জাঙ্গিরাই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মুমিত চত্বরে গতকাল বুধবার দুপুরে শ্রমিকরা সড়কে অবরোধে রাখে। এতে সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধে ধামাই চা বাগান, শিলঘাট ফাঁড়ি, সোনারুপা, পুঁচি ফাঁড়ি, আতিয়াবাগ, শিলুয়া ও রাজকি চা-বাগানসহ হাজার খানেক চা শ্রমিক মিছিল নিয়ে এম এ মুমিত চত্বরে জড়ো হন। পরে জুড়ী উপজেলা পরিষদে যোগদানে আসা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের আশ্বাস পেয়ে সড়ক অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।
সাতগাও চা বাগানের চা শ্রমিক আলপনা বাড়াইক বলেন, ‘১২০ টাকায় কিছুই হয় না। নুন আনতে পান্তা পুরায়। নেতা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বলছে কাজ করতে। আমরা বলছি, প্রধানমন্ত্রী যেদিন ঘোষণা দিবেন সেইদিন থেকে কাজে ফিরবো।
সাতগাঁও চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি কাজল কালিন্দী বলেন, ১৬ দিন ধরে চা শ্রমিকেরা খেয়ে না খেয়ে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন। ১২০ টাকা মজুরিতে কিছুই হয় না। শ্রমিকেরা প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে আছেন।;
ভাড়াউড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাগানে পাঠিয়েছি। বুধবার কাজে কেন যোগ দেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের সকল বাগানের চা শ্রকিরা কাজে না যাওযায় তারাও যাচ্ছেন না। তবে আজ আমাদের পঞ্চায়েত কমিটির মিটিং আছে,সিদ্ধান্ত পরে জানাবো।
ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিক সর্দার জয় নারায়ন হাজরা বলেন,‘ দীর্ঘ কর্মবিরতির কারণে শ্রমিকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। নানাবিধ সমস্যায় শ্রমিকরা পড়েছে। কোন রাজনীতিতে আমরা নাই। আমরা আজ থেকে কাজে নেমেছি। কিন্তু একেক জন একেক কথা বলে শ্রমিকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েচে। যার কারণে কাজে যোগ দেয়নি।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন,‘ডিসি অফিসে বলেছিলাম, আমাদের এক দিন সময় দিতে, যাতে আমরা শ্রমিকদের বোঝাতে পারি। কিন্তু তাঁরা আমাদের সময় দেননি। সাধারণ চা শ্রমিকেরা সহজেই মেনে নিতে পারছে না। সবার সঙ্গে কথা বলে একটা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
চুনারুঘাট এলাকার চা শ্রমিকদের নারী নেত্রী সভাপতি খাইরুন আক্তর বলেন, লস্করপুর ভ্যাালি ২৩টি বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি ও ছাত্র-যুবকদের নিয়ে আমাদের সভা হয়েছে। ওই সভায় যতদিন ৩০০ টাকা মজুরি আদায় না হয়, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কালিঘাট চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অবান তাাঁতি বলেন, কালিঘাট চা বাগান ছাড়াও বালিশিরা ভ্যালির সবগুলো চা বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেযনি। তাদেরকে বলেছি ৩০০ টাকা মজুরি ছাড়া কাজে যোগ না দিতে। প্রধানমন্ত্রী যেদিন ঘোষণা দিবেন,সেদিন শ্রমিকরা কাজে যোগ দিবে।’
এর আগে গত (২৩ আগস্ট) মঙ্গলবার ধর্মঘটের ১১তম দিনে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন। তাঁদের অনুরোধে ভাড়াউড়া, ভুরভুরিয়া ও জেরিন চা বাগানসহ ১৫টি বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মসূচী ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছেন চা শ্রমিকেরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছেন না সাধারণ চা শ্রমিকেরা। এখন বাগানে বাগানে ঘুরে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন মন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং জন প্রতিনিধিরা।