আজ ভয়াল সেই ২১ আগষ্ট ॥ মুহূর্তেই মৃত্যুপুরী

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ সেই ভয়াল-বিভীষিকাময় রক্তাক্ত ২১ আগষ্ট। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার আঠারোতম বার্ষিকী। একাত্তরের পরাজিত শত্রু ও তাদের দোসররা বারবার বেছে নিয়েছে অভিশপ্ত আগষ্টকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঊনত্রিশ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আবারও ঘাতকদের দল শোকাবহ এই আগষ্টেই জোট বেঁধেছিল।
শোকাবহ-রক্তাক্ত আগষ্ট মাসেই আরেকটি ১৫ আগষ্ট ঘটানোর টার্গেট থেকে ঘাতক হায়েনার দল ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট যুদ্ধে ব্যবহৃত মারণাস্ত্র গ্রেনেড দিয়ে রক্তস্রোতের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশস্থল। টার্গেট ছিল এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ নেতৃত্বশূন্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতেই ঘাতকরা চালায় এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ। পঁচাত্তরের রক্তাক্ত ১৫ আগস্টের মতোই ২১ আগস্টের হামলার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছিল।
২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের পেছনে ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের একাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, কয়েক শীর্ষ জঙ্গি আর একাত্তরের পরাজিত দেশ পাকিস্তান। হামলায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের পাকিস্তানে ট্রেনিং দেয়া হয়। ট্রেনিংয়ের পর তাদেরকে আর্জেস গ্রেনেডও সরবরাহ করে পাকিস্তান। আর হামলা শেষে পাকিস্তান অনেক ঘাতকদের আশ্রয়ও দেয়।
তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে হায়েনাদের হামলার ধরনও ছিল রক্তাক্ত ১৫ আগষ্টের মতোই। ২০০৪ সালের ২৪ আগষ্ট ভয়াল ও বীভৎস গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, আদালতে একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং আসামিদের জবানবন্দীতে উঠে আসে নেপথ্যের ঘৃণ্য হামলার পরিকল্পনার কথা।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, গুরুত্বপূর্ণ নথি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য, আসামিদের জবানবন্দী এবং সবশেষ মামলার রায় বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে, দেশের একাধিক রাজনৈতিক দল, জঙ্গি সংগঠন ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে এবং পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার মদদে ২১ আগষ্টে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এই হামলা চালানো হয়েছিল।
আজ রবিবার সেই রক্তস্নাত ভয়াল-বিভীষিকাময় ২১ আগষ্ট। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার আঠারোতম বার্ষিকী। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালে সভ্য জগতের অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাকা- চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে। গ্রেনেডের হিংস্র-দানবীয়-সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে।
রক্তঝড়ের প্রচ-তায় মলিন হয়ে গিয়েছিল বাংলা ও বাঙালির মুখ। জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেদিন যদি ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত ট্রাকে বিস্ফোরিত হতো, তবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কোন সিনিয়র নেতাই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। আর এটাই ছিল ঘাতকচক্রের মূল পরিকল্পনা।
ফিরে দেখা ২১ আগষ্ট : ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট। দিনটি ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শান্তির সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মানুষের স্রোত সমাবেশটিতে।
প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমাগমে রীতিমতো মহাসমাবেশে রূপ নেয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চতুর্দিক। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যাওয়ার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্চে চেপে বিকেল ৫টার একটু আগে সমাবেশস্থলে পৌঁছান বিরোধী দলের নেতা। সমাবেশে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোতে থাকলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক যুদ্ধে ব্যবহৃত গ্রেনেড। আর জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে।
শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে খই ফোটার মতো একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১২/১৩টি গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের ন্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তগঙ্গা বইয়ে যায় এলাকাজুড়ে। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল শেখ হাসিনা। পরিস্থিতির তাৎপর্য বুঝতে ট্রাকে অবস্থানরত নেতৃবৃন্দ ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যাকে। নেতা ও দেহরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও পরম করুণাময়ের অশেষ রহমতে মৃত্যুজাল ছিন্ন করে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগষ্ট ঘটাতে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা। গ্রেনেডের আঘাতে পরাস্ত করতে না পেরে ওই দিন শেখ হাসিনার গাড়িতে ঘাতকরা ছুড়েছিল বৃষ্টির মতো গুলি।
একেবারে পরিকল্পিত ও টার্গেট করা ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গুলি ভেদ করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাচ। তবে, শেখ হাসিনাকে আড়াল করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে জীবন বিলিয়ে দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ।
পরিকল্পিত হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে শেখ হাসিনা ফিরে এলেও ওই দিন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এই ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলার পর সেদিন স্পিøন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন শত শত মানুষ। আকস্মিক মৃত্যু আর রক্তস্রোতে লন্ডভন্ড শান্তিপ্রিয় অসংখ্য মানুষের হাত-পাসহ মানবদেহের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়েছিল।
কারও হাত নেই, কারও পা উড়ে গেছে। রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায় পিচঢালা কালো পথ। অস্থায়ী সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে রক্তের অনাহুত আল্পনা, শত শত মানুষের চিৎকার। বেঁচে থাকার জন্য, প্রাণ বাঁচানোর জন্য মুমূর্ষুদের আকুতি, কাতর আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।
নারকীয় হামলা প্রতিহতে সেই সময় কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের পুলিশ বাহিনী। শত শত রক্তাক্ত-ছিন্নভিন্ন হওয়া মানুষকে উদ্ধারের পরিবর্তে পরিকল্পিতভাবে চতুর্দিক থেকে টিয়ারগ্যাস ছুড়ে নিরবিঘ্নে ঘাতকদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়। এমনকি, অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধার করা হলেও আলামত নষ্ট করতে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামলাস্থলে থাকা সকল আলামত একে একে ধ্বংস করা হয়।
এমনকি, শত শত আহতরা যেন চিকিৎসা না পায়, সে জন্যও ওপরের নির্দেশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) সরকারী হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকদের অলিখিত নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছিল। হামলার পর অগণিত আহতদের নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে নেয়া হলেও মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে রাখা হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থক ড্যাবের নেতারাও চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করে। ফলে আহত বেশিরভাগ নেতাকর্মীকেই সরকারী হাসপাতালের পরিবর্তে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতালসহ নানা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এমনকি, নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ঘটেছে ওই ভয়াল সময়ে।
ঝরে যায় ২২টি তরতাজা প্রাণ : ২১ আগষ্টের সেই রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আরও কয়েকজন। নারী নেত্রী আইভি রহমান ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগষ্ট মারা যান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ।
রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহতরা হলেন- শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স কর্পোরাল (অব) মাহবুবুর রহমান, মোশতাক আহমেদ সেন্টু, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (সবার প্রিয় আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন সরদার, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।
মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন- প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (তৎকালীন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য) জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম, প্রয়াত সাহারা খাতুন, দলের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কাজী জাফর উল্লাহ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন, পংকজ দেবনাথ, সাঈদ খোকন, নজরুল ইসলাম বাবু, নাসিমা ফেরদৌসী, শাহিদা তারেক দিপ্তী, উম্মে রাজিয়া কাজল, আসমা জেরিন ঝুমু, রাশেদা আক্তার রুমা, আবুল হোসেন মোল্লা, মামুন মল্লিক, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, হামিদা খানম মণিসহ পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে : ভয়াল এই গ্রেনেড হামলার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়ার নাটকসহ হেন কোন অপকর্ম নেই যে, তা করেনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার তদন্ত শুরু করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে।
গ্রেনেড হামলার নেপথ্যের অনেক তথ্যই দেশবাসীর সামনে বেরিয়ে আসে। দেশবাসীর সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উচ্চপর্যায়ের পরামর্শেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, সিআইডি ও পুলিশের তখনকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ব্যাপারে অবহিত ছিলেন এবং অনেকেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িতও ছিলেন।
তদন্তে বেরিয়ে আসে বিএনপির উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে বৈঠক করেই এ হামলার পরিকল্পনা করা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার। এরপর আবদুস সালাম পিন্টু ও তার ভাই তাইজউদ্দিন, মাওলানা তাহের হামলার জন্য ১৫টি গ্রেনেড ঘাতকদের হাতে হস্তান্তর করে। শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নানের জবানবন্দীতেও হামলার ঘটনা অনেক আগে থেকে তারেক জিয়া জানতেন এবং হামলার ব্যাপারে তার সমর্থন ছিল- এটিও প্রকাশ পেয়ে যায়।
আসামিদের জবানবন্দীতেই হামলার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের ওই সময়ের পরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার ও এনএসআইয়ের মহাপরিচালক আবদুর রহিম, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গিনেতা তাইজউদ্দিন, মাওলানা ফরিদ, মুফতি আবদুল হান্নান, হুজির সাবেক আমির মাওলানা আবদুল সালাম এবং কাশ্মীরী জঙ্গি আবদুল মাজেদ বাটের নাম উঠে আসে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলায় পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রায় দেয়া হয়। রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান, দলটির নেতা হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত।
কর্মসূচী : ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। সকাল সোয়া ১০টায় ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।