কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৯ আগষ্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আওয়ামী লীগকে আর কোনো সময় দিতে রাজি নই। এখন জনগনের ঐক্য গড়ে তুলে রাজপথ দখল করে নিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনব। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করব। এই সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার ও জনগনের সংসদ গঠন করতে হবে। জনগণের কাছে আহ্বান- আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী অনেক কথা বলেছেন। তিনি সারাক্ষণ গালিগালাজ করেন। আমি যে কথাটা বলতে চাই, এতই যদি দক্ষ আপনারা, দেশটা ভালো চালাচ্ছেন, তাহলে উত্তরা থেকে আব্দুল্লাহপুরের রাস্তায় কেমন করে গার্ডার পড়ে গিয়ে এক পরিবারের ৫ জন মানুষ সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। প্রতিদিন প্রতিটি রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। কারণ কোথাও কোনো শৃঙ্খলা নাই, কোথাও কোনো শাসন নাই, সুশাসন নাই। সবখানে যে যেখানে পারছে লুট করছে, দুর্নীতি করছে, টাকা লুটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। যার জন্য কেউ কোনো কথা মানে না।
দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই সরকার দুর্নীতিবাজদের সরকার, এই সরকার চোরের সরকার, এই সরকার ডাকাতের সরকার। এরা অবৈধ। রাতের অন্ধকারে নির্বাচন করেছে, জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে।
বাংলাদেশে গুমের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলের দেওয়া বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি এখানে এসে যাওয়ার আগে একটা বিবৃতিতে পরিস্কার করে বলেছেন, এখানে র্যাবের হাতে যে গুম হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তার সমস্ত প্রমাণ এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এটার বিচার করা দরকার। এদের অবশ্যই স্বাধীন তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ কথার পর থেকে তাদের শরীরে যে বিছুটি ছিটায় না, ওই বিছুটি ছুটে গেছে। তথ্যমন্ত্রী ওই হাই কমিশনারকে সবক দিচ্ছেন যে, আপনি ফিলিস্তিন দেখেন, মিয়ানমার দেখেন।
তথ্যমন্ত্রীকে আগে বাংলাদেশ দেখার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বাংলাদেশের কত হাজার মানুষ আপনি হত্যা করেছেন, কত মানুষকে গুম করেছেন।
গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ইলিয়াস আলীর আজকে তার ছেলের বিয়ে আছে। কত বছর হয়ে গেছে এই ইলিয়াস আলীকে আপনারা গুম করেছেন তার খবর পাওয়া যায়নি। লাকসামের পারভেজকে আপনারা গুম করেছেন, অনেক ছাত্র নেতাকে আপনারা গুম করেছেন। তাদের মায়েরা চেয়ে থাকে কখন তার ছেলে ফিরবে? এই সরকার তাদের মায়েদের বুক খালি করেছে। আমরা অবিলম্বে গুম হওয়া মানুষদের খোঁজ চাই, আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। নিশ্চয়ই ওই ‘নেত্র নিউজ’ আপনারা সবাই দেখেছেন, ‘আয়নাঘর’ দেখেছেন। আমরা জানতে চাই এই ‘আয়নাঘর’ কতটুকু সত্যি, কি আছে তা বলতে হবে। জনগণ জানতে চায়।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতো চ্যালেঞ্জ করবেন না। ক্ষমতা ছাড়ুন, ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় নামুন। দেখা যাবে এদেশে জনগণের শক্তি বেশি না আপনাদের মতো দুর্নীতিবাজদের শক্তি বেশি। অবশ্যই আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ক্ষমতায় থেকে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা যায়। ক্ষমতা ছেড়ে আসুন তখন বুঝা যাবে আপনার শক্তি কত? এদেশে কয়টা লোক আপনার পক্ষে আছে তখনই বুঝা যাবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, এসএম জিলানী, ফখরুল ইসলাম রবিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।