বাংলাদেশে রেলপথে মুখোমুখি সংঘর্ষ, ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়া, লেভেলক্রসিংয়ে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ অনবরত ঘটেই চলেছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? যত দূর জানা যায়, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশির ভাগ রেলপথ চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় ট্রেন চলার সময় লাইন মাটিতে দেবে যায়। কোথাও আবার লাইনের নিচে পাথর প্রায় নেই বললেই চলে।
স্লিপারগুলোও ভাঙাচোরা। রেলওয়েতে প্রকল্পের পর প্রকল্প নেওয়া হয়, কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে?
দেশের পুরনো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। অনেক রেলপথ ও স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার রেলওয়েকে নতুন করে গড়ে তুলতে আন্তরিক। নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো রেলপথ নতুন করে চালু করা হচ্ছে। কোনো দিন ট্রেন চলেনি এমন অনেক এলাকায় রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। অনেক এলাকায় এরই মধ্যে রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণে আমরা কতটা যত্নবান?
গত রবিবার রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ধীরাশ্রম স্টেশনের আউটার সিগন্যালের কাছে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে অল্পের জন্য ট্রেনের প্রায় এক হাজার ৩০০ যাত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, গাজীপুরে গত সাড়ে তিন মাসে ছয়বার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। গত ৭ আগস্ট দুপুরে জামালপুর থেকে ঢাকাগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের হুক ভেঙে শ্রীপুর স্টেশনে ট্রেনটি পাঁচ ঘণ্টা আটকা পড়ে। ৫ জুন দুপুরে জয়দেবপুর জংশনে প্রবেশের সময় মালবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ১৬ জুন দুপুরে টঙ্গী জংশনে একটি তেলবাহী ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ১৪ জুন সকালে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকাগামী ভাওয়াল এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ২৭ মে রাতে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ১০ ঘণ্টা পর ওই পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঢাকা-গাজীপুর রেল ভ্রমণে সময় লাগে কম। ভাড়াও কম। সর্বোপরি নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক বেশি মানুষ রেলে যাতায়াত করে। কিন্তু ঘন ঘন দুর্ঘটনার পর গাজীপুরের রেলপথ এখন অনেকের কাছে আতঙ্কের কারণ। যাত্রীদের অভিযোগ, রেলপথে পর্যাপ্ত স্লিপার নেই। পিন, নাটবল্টুও কম। থাকলেও নড়বড়ে। রেলপথে প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবে ঘটছে এমন দুর্ঘটনা।
নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের মাধ্যমটি অনিরাপদ হলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হবে। কাজেই শুধু গাজীপুর নয়, সারা দেশের রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি নিশ্চিত করুন।