কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীদের সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রবীণ ও ত্যাগীদের মূল্যায়নে গুরুত্বারোপ করেছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের তাগিদ দিয়েছেন।
রবিবার (১৪ আগষ্ট) দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সভায় শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, বৈঠকে সংগঠনের কোথায় কী অবস্থা, কতগুলো শাখার সম্মেলন হয়েছে, কতগুলো বাকি আছে দলীয় সভাপতি তা জানতে চেয়েছেন। বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন দ্রুত সময়ে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সম্মেলন হওয়ার শাখাগুলোর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে দলকে গোছানোর জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, তৃণমূলের কমিটি গঠনের সময় ত্যাগী পুরনো আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মূল্যায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সো কল স্মার্ট লোকদের দলে নেওয়া যাবে না এবং পদ দেওয়া যাবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন। দলীয় প্রধান বলেছেন, কাউকে দলের পদ দেওয়ার আগে তার শেকড় কোথায়, কোন জায়গা থেকে এসেছে তা জানতে হবে। তিনি বলেছেন, শেকড় উচ্ছেদ করা যাবে না।
তৃণমূলের যেসব ত্যাগী ও প্রবীণ নেতা অভিমান করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে আছেন তাদের বুঝিয়ে দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় এবং মূল্যায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। শেখ হাসিনা নেতাদের বলেছেন, ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের রাগ-ক্ষোভ ভাঙাতে হবে। মনে রাখতে হবে তারাই আওয়ামী লীগ।
তৃণমূলকে নির্বাচনমুখী ও উজ্জীবিত করতে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও সেপ্টেম্বরের থেকে সুবিধাজনক সময়ে বিভাগভিত্তিক বসতে পারেন বলে সাংগঠনিক সম্পাদকদের জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে এমন উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতাদেরও ডাকতে পারেন বলে বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্রোহীদের বিষয়ে অনড় অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দিয়েছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান। তারা বলেন, তিনি আমাদের বলেছেন বিগত নির্বাচনগুলোতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন তাদের বিষয়ে সম্পূর্ণ খোঁজ-খবর ও যাচাই-বাচাই করতে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পথ চলার কথা বলেছেন।
জনপ্রতিনিধি ও তৃণমূলের নেতাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য জরিপ নিয়মিত চলছে বলে বৈঠকে নেতাদের জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, এমপিদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। না হলে তারা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
পদ বাণিজ্যের অভিযোগগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, তিনি দায়িত্বপ্রাপ্তদের দ্রুত এ প্রতিবেদন তৈরি করে তার কাছে জমা দিতে বলেছেন। এ সময় শেখ হাসিনা নেতাদের বলেন, পদ বেচা যাবে না।
সভায় নেতাদের সাংগঠনিক সফর পুরোদমে শুরু করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এসব সফরে করা সভা-সমাবেশে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ত করতেও বলেছেন তিনি। প্রচার, প্রচারণা ও বক্তব্যে গুজব ও অপপ্রচারের জবাব, উন্নয়নের প্রচারের ওপর জোর দিতে বলেছেন।