স্পোর্টস ডেস্ক :
বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার পরই অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে, সাকিব আল হাসানই হচ্ছেন এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। এছাড়া দেখার বিষয় ছিল মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে দলে ফেরানো হয় কি না।
অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাকিব আল হাসানকে করা হলো টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক এবং দলে ফেরানো হলো মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। তবে ইনজুরিতে থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা থাকায় নুরুল হাসান সোহানেরও নাম রাখা হয়েছে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে।
সাকিব শুধু আসন্ন এশিয়া কাপেই নয়, চলতি বছর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ত্রি-দেশীয় সিরিজেও নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। এই সিরিজের অন্য দলটি হলো পাকিস্তান।
বিকেলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের গুলশানস্থ বাসভবনে এক বৈঠক শেষে সাকিবকে অধিনায়ক মনোনয়ন দেয়ার কথা ঘোষণা করেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। এ সময় তিনি জানান, বিশ্বকাপের পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাকিবের অধিনায়কত্ব বহাল থাকবে নাকি পরিবর্তন করা হবে, তখন চিন্তা করা হবে।
অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের নাম ঘোষণার পরই এশিয়া কাপের জন্য ১৭ জনের দল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। এ সময় তার পাশে ছিলেন আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক, এশিয়া কাপের স্কোয়াড চূড়ান্ত করা নিয়ে আজ বিকেলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের গুলশানস্থ বাসভবনে বৈঠকে বসেন বিসিবি সভাপতি, জালাল ইউনুস, টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, নির্বাচক হাবিবুল বাশার এবং সদ্য ঘোষিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
সেই বৈঠকেই দল চূড়ান্ত করণসহ অধিনায়কও হিসেবে সাকিবকেও মনোনয়ন দেয়া হয়। যদিও তার আগে বেটিং কোম্পানি বেটউইনার নিউজের সঙ্গের বিষয়ে সাকিবের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয় বিসিবির পক্ষ থেকে। সেখানে সাকিব নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হওয়ার কথা জানান এবং বিসিবিও তার দেয়া ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করে নিয়েছে।
মূলত জিম্বাবুয়ে সফরে টি-টোয়েন্টি দলে যারা ছিলেন তাদেরই এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি দলে রাখা হলো। ইনজুরির কারণে বাদ পড়লেন ওপেনার লিটন দাস। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরানো হয়েছে মিডল অর্ডার ব্যাপার সাব্বির রহমান রুম্মনকে।
জিম্বাবুয়ে সফরে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল দুই সিনিয়র মুশফিক এবং রিয়াদকে। সাকিব নিজে থেকেই ছুটি নিয়েছিলেন। যদিও সোহানের ইনজুরির কারণে জিম্বাবুয়ে সফরের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দলে ফেরানো হয়েছিল রিয়াদকে।
অধিনায়কের নাম ঘোষণা করতে গিয়ে জালাল ইউনুস বলেন, ‘আমাদের সামনে এশিয়া কাপ আছে, এরপর নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ, এবং এরপর অস্ট্রেলিয়াতে রয়েছে বিশ্বকাপ। আমরা যে সভা করেছিলাম সেখানে বোর্ডের একটা সিদ্ধান্ত ছিল। সেই সিদ্ধান্তটা আজকে আবার আলোচনা করেছি। আমাদের মাননীয় বোর্ড সভাপতি এবং নির্বাচকরা ছিলেন। এই কয়েকটা সিরিজের জন্য সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করছি। এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ড ট্রাইনেশন সিরিজ এবং তারপর বিশ্বকাপ পর্যন্ত।’
বেটউইনার নিউজের মত জুয়ার সঙ্গে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠানের (বেটউইনারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান) সঙ্গে চুক্তির পরও পরও সাকিবকে অধিনায়ক করার পেছনে যুক্তিটা কী? জানতে চাইলে এ জবাবে জালাল ইউনুস বলেন, ‘হি ইজ আওয়ার বেস্ট প্লেয়ার। আমরা তাকে ওউন করি। সে আমাদের বোর্ডের বা দেশের বাইরের কেউ না। সে যখন বলেছে যে এটা মিসটেক, আমরা ধরে নিয়েছি যে এটা মিসটেক। তবে তাকে বলা হয়েছে, সে যেন এ ধরনের মিসটেকের পূনরাবৃত্তি না করে। সে আমাদের বলেছে নেক্সট টাইম এ ধরনের মিসটেক আর হবে না। আমাদের বোর্ড প্রেসিডেন্টের সামনে সে আশ্বাস দিয়েছে। আমরা সেটা মেনে নিয়েছি।’
এ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে টি-টোয়েন্টি দলের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেলেন সাকিব আল হাসান। ২০০৯-১০ সালে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে চার ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেন এ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এরপর ২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসরের পর প্রথম দফায় টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় তাকে।
২০১৯ সালে আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার আগে সাকিবই ছিলেন জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত তার অধীনে ২১টি কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে জয় মিলেছে সাত ম্যাচে। এবার আসন্ন এশিয়া কাপ দিয়ে শুরু হবে সাকিবের নতুন অধ্যায়।