কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে গুর”ত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব।
বঙ্গমাতার ত্যাগ ও সাহসের কথা তুলে ধরে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিত্ত-বৈভব বা ক্ষমতার জৌলুস কখনও তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি।
সোমবার বঙ্গমাতার ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্র চালিয়েছেন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু অনেক বিষয়ে আমার মা তার পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন। নানান কাজে সহযোগিতা করেছেন।
‘আমার বাবার সৌভাগ্য যে, তিনি এমন একটা জীবনসঙ্গী পেয়েছিলেন বলেই এত সফলতা পেয়েছেন। দেশ স্বাধীন করতে পেরেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন আদর্শ বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি। নির্লোভ, নিরহংকার ও পরোপকারী এবং পার্থিব বিত্ত-বৈভব বা ক্ষমতার জৌলুস কখনও তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সহধর্মিণী হয়েও তিনি ‘ফার্স্ট লেডি’ পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে, সব সময় সাদামাটা জীবনযাপন করতেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার মা কখনোই এটা লাগবে, ওটা লাগবে বলেননি। এটা না হলে ঘর ছেড়ে চলে যাবো বলেও হুমকি দেননি। যখন যে অবস্থায় ছিলেন, মানিয়ে নিয়েছেন। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
‘তিনি (ফজিলাতুন নেছা মুজিব) গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করতেন। বঙ্গমাতা যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’
দেশের নারীসমাজের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশের নারীসমাজ যেন আমার মায়ের আদর্শ ধারণ করে চলে। চাওয়া পাওয়া ও বিলাসিতাই জীবন নয়, ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গমাতার অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং অবদানের কারণে জাতি তাঁকে ‘বঙ্গমাতা’ উপাধিতে ভূষিত করেছে।
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিন বছর বয়সে তিনি পিতা এবং পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পিতা-মাতার কাছে লালিত-পালিত হন। ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দৃঢ়চেতা ও বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী। তিনি শুধু জাতির পিতার সহধর্মিণীই ছিলেন না, বাঙালির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁর সাহসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তে মামলার সব রাজবন্দির জীবন রক্ষা হয় এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। ৬-দফা ও ১১-দফা আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ অবদান রাখেন।
‘স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতার সঙ্গে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে, যা জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।