কাজিরবাজার ডেস্ক :
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে। সোমবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইটে প্রথম দফায় ৫৩ কর্মী ঢাকা ত্যাগ করেন। চলতি মাসে আরও কয়েক দফায় কর্মী যাবেন। এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মোঃ শহিদুল আলম জানিয়েছেন, সোমবার রাত থেকে শুরু হয়েছে কর্মী যাওয়া। শুরুতে ৫৩ কর্মী গেলেন। এমওইউ’র পর এটাই প্রথম ফ্লাইট। লাইনে আছে অনেক। প্রায় পাঁচ হাজারের মতো প্রসেসের মধ্যে আছে। এ মাসে আরও কয়েকটা ফ্লাইট যাবে। আগামী মাস থেকে পুরোদমে যাওয়া শুরু হবে। প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মী যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। ওই সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে বন্ধ ¤্রমবাজার খুলতে বিভিন্ন ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালায় ঢাকা। এর ফল হিসেবে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার সঙ্গে কর্মী প্রেরণ নিয়ে চুক্তি করে বাংলাদেশ।
চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের শুরুতেই কর্মী যাওয়া শুরু হবে বলে আশা ছিল সরকারের। সে লক্ষ্যে দেশের দেড় হাজারের বেশি বেধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকাও পাঠানো হয় মালয়েশিয়ায়। কিন্তু দেশটি ২৫টি এজেন্সির তালিকা ঢাকাকে পাঠায়। ফলে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি তথা সিন্ডিকেট ইস্যুতে আবার শ্রমবাজার চালু নিয়ে দেখা দেয় নতুন জটিলতা।পরে অবশ্য গত ২ জুন বিষয়টি সুরাহা করতে ঢাকায় বসে দুদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। বৈঠকের পর আশা করা হচ্ছিল কর্মী যাওয়া শুরু হবে। কিন্তু এরপরও কেটে যায় দুই মাসের বেশি সময়। তবুও তা চালু হয়নি। গত ৬ জুলাই মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সরকারী খরচের কথা জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
তিনি জানিয়েছিলেন, মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জন্য ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই খরচ শুধু বাংলাদেশ অংশে। গত বছরের ডিসেম্বরে করা মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, কর্মীর বেশিরভাগ খরচই নিয়োগকর্তা বহন করবেন। তবে বাংলাদেশে কর্মীর কিছু খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে। এসব খরচের মধ্যে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োগ ও কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এছাড়া, নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশী কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইন্স্যুরেন্স, করোনা পরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বহন করবেন। নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বীমাসহ চিকিৎসাও নিশ্চিত করবেন। গত ১২ জুন থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গমনেচ্ছুদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএমইটি। সংস্থাটি জানায়, জেলা কর্মসংস্থান অফিস কিংবা অনলাইনে ‘আমি প্রবাসী’ এ্যাপের মাধ্যমে এই নিবন্ধন করা যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যেভাবে বাংলাদেশী কর্মীরা যাবেন- বিএমইটি ২৬ জুলাই তার একটি রূপরেখা প্রকাশ করে।
এ রূপরেখা অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে কর্মীদের ১৩টি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন, ২০১৯ সালে ৫৪৫ জন, ২০২০ সালে ১২৫ জন এবং চলতি বছর মাত্র ১৪ বাংলাদেশী মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ২১৩ বাংলাদেশী কর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমিক পাঠানোর ২৫ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বদানকারী রিক্রটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে এসব কর্মী মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন। কর্মীরা ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার হিসেবে যাচ্ছেন সেখানে। তাদের বেতন ১৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৩২ হাজার টাকা। শর্ত অনুসারে তাদের চুক্তি তিন বছরের। ওয়ান ওয়ে প্লেন ভাড়া, বাসস্থান ও যাতায়াত ফ্রি পাবেন কর্মীরা। তবে খাবার ব্যবস্থা করতে হবে নিজেকে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আরও বেশ কয়েকটি গ্রুপ মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।