স্টাফ রিপোর্টার :
জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ করেই গত শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটে পরিবহন সংকট ও ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। খুচরা মূল্য ডিজেল ১১৪ টাকা প্রতি লিটার, কেরোসিন ১১৪ টাকা প্রতি লিটার, অকটেন ১৩৫ টাকা প্রতি লিটার ও পেট্রোল ১৩০ টাকা প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর গতকাল শনিবার সকাল থেকে পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন কাজে বের হওয়া মানুষজন। বিশেষ করে বিপাকে পড়েন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা।
শনিবার সকালে সিলেটের বিভিন্ন এলাকার রাস্থায় দেখা যায়, রাস্তায় গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। কিন্তু গাড়ির দেখা মিলছে কম। এসব গাড়িতে উঠতে যাত্রীদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বাসভাড়া আগে ছিল ১২০ টাকা। এখন ১৪০ টাকা করে দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। সিলেট থেকে দিরাই রুটে ১৪০ টাকার ভাড়ায় এখন বাড়তি ২০ টাকা যোগ করে ১৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
নগরীর দক্ষিণ সুরমা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অন্যদিনের তুলনায় বাস ছাড়ছে অনেক কম। টার্মিনালে বাস সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাস কম চলাচল করায় দুর্ভোগে পরেছেন যাত্রীরা। গাড়ি না পেয়ে অনেককে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, অনেক পরিবহন সংস্থা মূল ভাড়ার চেয়ে একশো থেকে দেড়শ টাকা বাড়তি রাখছে।
শ্রীমঙ্গল থেকে বাসে করে সিলেটে আসা শাকিল আহমদ বলেন, আমি সপ্তাহে দুদিন শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেটে যাওয়া আসা করি। এই সড়কের ভাড়া কালকেও ছিল ১৩০ টাকা। গতকাল কোন ঘোষণা ছাড়াই ১৮০ থেকে ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। তিনি নিজেও ১৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে সিলেট এসেছেন বলে জানান শাকিল।
টার্মিনালে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে বসে থাকা পরিবহন শ্রমিক সবুজ মিয়া বলেন, আমি সিলেট জকিগঞ্জ সড়কে বাস চালাই। ডিজেলের দাম যে পরিমাণ বাড়ছে তাতে প্রতি ট্রিপে জ্বালানী খরচ ২ হাজার টাকা বেড়ে যাবে। অথচ একটি ট্রিপে খরচ শেষে ২ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, এখন গাড়ি চালালে লাভের বদলে লোকসানই হবে। মালিক পক্ষ কেন লোকসান দিয়ে গাড়ি চালাবে।
বাস চালক ও সহকারীরা বলছেন, শুক্রবার রাতে হাঠৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না অনেক পরিবহন মালিকরা। পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, এতো বাড়তি দামে তেল কিনে গাড়ি চালিয়ে মালিক শ্রমিক কেউই টিকতে পারবে না। রাতে মালিক শ্রমিক নেতারা বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এতে ধর্মঘটসহ কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আমরা এখন ভাড়া বাড়াইনি। এরকম সিদ্ধান্তও হয়নি। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। রাতে আমরা সভা করে সিদ্ধান্ত নেবো। ভাড়া সমন্বয় না করলে ক্ষতির মুখে পড়বেন জানিয়ে তিনি বলেন, লোকসানের শঙ্কায় গতকাল অনেক বাস চলছে না। অনেকে বাস কাউন্টারও বন্ধ করে দিয়েছে। এতো বাড়তি দাম দিয়ে জ্বালানী কিনে গাড়ি চালানো সম্ভব না।
এদিকে জ্বালানীর দাম কমানো না হলে কঠোর কর্মসূচী আসতে পারে জানিয়ে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, এতো বাড়তি দামে তেল কিনে গাড়ি চালিয়ে মালিক শ্রমিক কেউই টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, রাতে মালিক শ্রমিক নেতারা বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এতে ধর্মঘটসহ কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।