ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাঁচান

9

আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়া সারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে এবং ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে সরকার ইউরিয়া সারের দাম কেজিপ্রতি ছয় টাকা বাড়িয়েছে। সোমবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ১৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এটা ঠিক ইউরিয়া সারে সরকারকে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি সেই ভর্তুকির পরিমাণ আরো অনেক বেড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের দাম ৮১ টাকা। গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ছয় টাকা দাম বাড়ানোর পরও সরকারকে প্রতি কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল সাত হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। আবার এই ভর্তুকি নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) অনেক দাতা সংস্থার আপত্তিও রয়েছে। জানা যায়, আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে বিভিন্ন খাতে যে ভর্তুকি দেওয়া হয় তা কমাতে বলেছে।
দুই দফা বন্যায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। এই মুহূর্তে তাঁরা নতুন করে ধারদেনা করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। শ্রমিক, কীটনাশক, সেচ, জমি চাষসহ সর্বত্রই তাঁদের অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় সারের বাড়তি দাম তাঁদের কাছে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অনেক কৃষিবিদ দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি আপাতত স্থগিত রাখারও অনুরোধ করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, তা না হলে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে নিরুৎসাহ হয়ে পড়বেন।
দুদফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। জানা যায়, ইউরিয়া সারের মজুদ সন্তোষজনক। তদুপরি আমাদের যেসব ইউরিয়া সার কারখানা রয়েছে, সেগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে পুরোদমে চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আর তা করা গেলে আমদানির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। আমরা আশা করি ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি সরকার স্থগিত করার উদ্যোগ নেবে।