দেশে চালের চাহিদার বড় অংশই পূরণ করে বোরো ধান। সেই বোরো উৎপাদনের ভরা মৌসুমেও এবার চালের বাজার অস্থির ছিল। সেই অস্থিরতা এখনো চলছে। ক্রমাগত চালের দাম বাড়ছে।
চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি দেয়। শুল্ক ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। সেই চাল বাজারে আসতেও শুরু করেছে। এরই মধ্যে ভারত থেকে ১২ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন চাল এসেছে। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। চালের দাম না কমে উল্টো আরো বাড়ছে।
বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনো বছর উৎপাদন চাহিদার চেয়ে সামান্য কম হয়, কোনো বছর উদ্বৃত্ত হয়। কোনো কোনো বছর চাল রপ্তানিও করা হয়েছে। জানা যায়, এ বছর সামান্য যেটুকু ঘাটতি ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি চাল আমদানি করা হয়েছে। এর পরও চালের বাজার এমন অস্থির কেন? বিশেষজ্ঞরা, এমনকি ব্যবসায়ীরাও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান না। অনেকেই ধারণা করেন, বেসরকারি পর্যায়ে চাল মজুদ রাখার সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। সেই সব মজুদকারী বাজারে বড় ধরনের প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। এই অবৈধ মজুদ খুঁজতে গত মাসে অভিযানও পরিচালনা করা হয়। কিন্তু দুর্বল অভিযান মজুদ কমাতে কিংবা বাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এখন দেখা যাচ্ছে, আমদানিও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। নানা অজুহাতে আমদানিকারকরা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করছেন।
চাল আমদানিকারকরা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং ভারতে চালের দাম বাড়তি থাকায় আমদানিতে দাম বেশি পড়ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত, তাদের এই দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা করা। কোন ব্যবসায়ী এলসি খুলতে কত টাকায় ডলার কিনেছিলেন, ভারতে চালের বাজারদর তখন কত ছিল, সেসব যাচাই করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ তুলে দিলেও কোনো লাভ হবে না। বাজারে চালের দাম কমবে না।
শুধু চাল নয়, বাজারে গমের দামও অযৌক্তিক। ভোক্তাদের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। সেই দায়িত্ব সরকারকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। শহরে কয়েকটি স্থানে নামমাত্র ট্রাক সেলের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দেশব্যাপী সরকারের বিক্রয় কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করতে হবে।