বিএনপির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
টানা তিন বছর ধরে ঘাটতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এবারও দলটির আয়ের চেয়ে সোয়া কোটি টাকা ব্যয় বেশি হয়েছে।
ফলে এই ঘাটতি মেটানো হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মনোনয়ন ফরম বিক্রির সঞ্চিত অর্থ থেকে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ২০২১ পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে দলটির আয় ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৪৪৪ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ টাকা। মোট ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৭ টাকা। রিজভী বলেন, ঘাটতি মেটানো হয়েছে ব্যাংক রিজার্ভ থেকে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির আর সঞ্চয় হয়নি। সে সময় দলটির তহবিল দাঁড়িয়েছিল ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ টাকা। এরপর থেকে টানা তিন বছর কেবল ব্যয় বেড়েছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালে বিএনপির আয় হয়েছিল ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৯ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩। ব্যয় বেশি হয়েছে ৫১ লাখ ৯৯ লাখ ৩৬৪ টাকা, যা বিএনপির তহবিল থেকে খরচ করা হয়েছে।
২০১৯ পঞ্জিকা সনের যে হিসাব দিয়েছিল দলটি, তাতে সে বছর আয়ের চেয়ে তিনগুণের বেশি ব্যয় হয়েছিল। সে সময় বিএনপির আয় করেছে ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা। আয়-ব্যয়ের পার্থক্য হচ্ছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৭ টাকা। অর্থাৎ আয়ে তিনগুণেরও বেশি ব্যয় হয়েছে।
তবে এর আগে টানা তিনবার ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি ছিল দলটির। বিএনপি মনোনয়ন ফরম বিক্রি, দলীয় সদস্যদের মাসিক চাঁদা, এককালীন অনুদান হতে আয় করে থাকে। আর অফিসের বিভিন্ন খরচ, নির্বাচনী ব্যয়, ত্রাণ কার্যক্রম, কর্মচারী বেতর-ভাতা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন প্রভৃতি খাতে ব্যয় করে থাকে। বিএনপি কর্মচারিদের বেতন-বোনাস প্রদানে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে। ৭৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এ খাতে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, দলগুলোর সবচেয়ে বড় আয়ের খাত হলো নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সেই অর্থ সংগ্রহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তহবিল বড় না হয়ে কেবল দিনদিন ছোট হচ্ছে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বিএনপি আয় দেখিয়েছিল ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩টাকা। তখন দলীয় তহবিলে মোট উদ্বৃত্ত ছিল ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭টাকা।
২০১৭ সালে দলটি মোট আয় দেখিয়েছিল ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৯০২ টাকা। আর মোট ব্যয় দেখিয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪ টাকা। ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৮ টাকা হাতে বা ব্যাংকে রয়েছে।
২০১৬ সালে বিএনপির আয় হয়েছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫২ টাকা। আয় বেশি হয়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ৭৭৮ টাকা।
এর আগের তিন বছর দলটি ঘাটতিতে ছিল। ২০১৫ পঞ্জিকা বছরে বিএনপি ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৮৪ টাকা ঘাটতি দেখিয়েছিল। ওই সময় দলটি আয় দেখিয়েছিল ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৩৬৫ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৯ টাকা।
২০১৪ পঞ্জিকা বছরে দলটি বিভিন্ন খাতে দুই কোটি ৮৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৪ টাকা আয় দেখিয়েছে। আর ব্যয় দেখিয়েছে তিন কোটি ৫৩ লাখ তিন হাজার টাকা। এতে আয়ের চেয়ে ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৬ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে দলটির।
২০১৩ পঞ্জিকা বছরে দলটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ টাকা আয়ের বিপরীতে ২ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৩২৬ টাকা ব্যয় দেখিয়েছিলো। সে সময় ঘাটতি ছিলো প্রায় দেড় কোটি টাকা।
প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দলগুলোকে আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে দাখিল করতে হয়।