বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে এলে পুলিশ যেন তাদের বাধা না দেয় – প্রধানমন্ত্রী

7
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে যুক্ত হয়ে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন ও বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক প্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে আসতে চাইলে পুলিশকে বাধা না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি বসাবো, চা খাওয়াবো। কথা বলতে চাইলে শুনবো।
কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।
শনিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের যৌথসভার শুরুতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন তিনি।
কারও নাম উচ্চারণ না করে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমিতো বলে দিয়েছি- তারা (বিএনপি) যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসে, তাদের পুলিশ যেন বাধা না দেয়। বিশেষ করে বাংলামটরে যে বাধা দেওয়া, সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আসুক না হেঁটে হেঁটে যতদূর আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বসাবো, চা খাওয়াবো। কথা বলতে চাইলে শুনবো। কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তবে যদি বোমাবাজি করে ও ভাঙচুর করে সেটা করলে বাধা দেবো এবং উপযুক্ত জবাব পাবে। এটাও বাস্তবতা। কিন্তু গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো বাধা নেই। যত আন্দোলন সেটাতো করেই যাচ্ছে। ’
বিএনপির মিছিলে লোক হয় না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি মনে করি, কারও না কারো তো কথা বলা উচিত। কথা যত পারে বলুক। যদিও সারাদিন কথা বলেও বলে আমাদের কথা বলতে দেয়নি। মিছিল করে লোক হয় না, বলে আমাদের লোক আসতে দেয় না। এ রকম অভিযোগ তো তারা করে। তাদের কাছে আসবে কেন? কোন আশায় আসবে। সেটা হলো বাস্তব কথা। সেটা একটু চিন্তা করতে হবে। ’
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে তাদের ব্যাপারেও বলতে চাই। বাংলাদেশে যদি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন ডিসিপ্লিন এসে থাকে সেটাও আওয়ামী লীগেরই অর্জন। ’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় এদেশের জনগনের ভোটে বিশ্বাসী। আমরা সেটাই বিশ্বাস করি। সে জন্য নির্বাচন ব্যবস্থায় যতটা উন্নতি হয়েছে সেটা আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই হয়েছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমালোচনা যারা করে তাদের এই কথাই বলবো যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়, অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, আর্থসামাজিক উন্নতি হয়। ’
সমালোচনায় কান না দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘যারা বলার তারা বলুক আমাদের কাজ আমরা করে যাবো। কারণ দেশের উন্নতই আমাদের লক্ষ্য। সেই উন্নয়নের কাজটাই আমরা করবো। সেই কাজটিই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সেটা ধরে রেখে এগিয়ে নিয়ে যাবো। ’
বিএনপি আমলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১-২০০৬ থেকে পর্যন্ত পাঁচ পাঁচ বার বাংলাদেশে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার ক্ষমতায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানেই হচ্ছে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অর্থ পাচার, মানবপাচার এই সব। যারা এসবের সঙ্গে যুক্ত থাকে তারা তো দেশের জন্য কাজ করবে না। ’
আওয়ামী লীগ জনগণের সেবা করে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই এদেশের মানুষ জনগণের সেবা পেয়েছে। জনগণকে সেবা দিয়েছে, জনগণের সমর্থন পেয়েছে। ’
‘আওয়ামী লীগ সব সময় যেকোন দুযোর্গে-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে আছে। আওয়ামী লীগ সব সময় মানবতার সেবা করে যাচ্ছে। আর কিছু লোক সারাক্ষণ দোষ ধরার চেষ্টা করে। ’
৭৫ পরবর্তী সময়কার শাসকদের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পর পর তিনবার ক্ষমতায় এসে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ৭৫ থেকে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় বাংলাদেশের মানুষকে কি দিয়েছে? আর দেশের জন্য কি করেছে? সেটা বাংলাদেশের মানুষের উপলব্ধি করা উচিত। এরা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি, দুঃশাসন, মিলিটারি রুল, গণতন্ত্র হরণ করেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যত রকমের অপকর্ম করা যায় সবই করে গেছে। ’
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে সবাই মিলে সঞ্চয় করতে হবে, কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। ’
সভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।