লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে প্রাণের এনার্জি ড্রিংকসের শুটিং করায় কর্মকর্তাকে জেলে প্রেরণ

3

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে আইন লঙ্ঘন করে প্রাণ আরএফএলের একটি এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের শুটিং করায় একজনে জেলে পাঠিয়েছে আদালত।
গত রবিবার বিকেলে মৌলভীবাজার বন আদলত এবিএম রিন্টু নামের শুটিং ইউনটের এক কর্মকর্তাকে জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেলে প্রেরণের নির্দেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সাইফুর রহমান। রিন্টু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রডাকশন হাউজের লাইন প্রডিউসার বলে জানা গেছে।
তবে প্রাণ আরএফএলের জনসংযোগ কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, রিন্টু তাদের কর্মী নন। এ ব্যাপারে আর মন্তব্য করতে রাজি হননি তৌহিদুজ্জামান। বন বিভাগের আইন লঙ্ঘন করে বনের ভেতরে জেনারেটর ব্যবহার ও উচ্চ ক্ষমতার লাইট জ্বালিয়ে শুটিং করার অভিযোগে রিন্টুর বিরুদ্ধে গত জুনে মামলা করে বন বিভাগ।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, গত ৮ জুন প্রাণ প্রডাকসন হাউজের এনার্জি ড্রিংকসের একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণের জন্য ওই কোম্পানী বনের আইন ভেঙ্গে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে ধোয়া সৃষ্টি করে এবং বড় বড় দুটি জেনারেটর চালিয়ে বনের ভেতর আলোকিত করে শুটিং কার্যক্রম চালায়।
একই সাথে তারা সেখানে অবস্থান করে রান্না শুরু করলে বন বিভাগের লাউয়াছড়ায় দায়িত্বরত কর্মীরা দ্রুত গিয়ে তাদের বাঁধা দেয়। পরে রাতেও অননুমোদিতভাবে বনের ভেতরে জেনারটর ও শুটিং সরঞ্জাম রাখার কারণে বন বিভাগ তাদের মালামাল জব্দ করে মৌলভীবাজার বন আদালতে মামলা দেয়। ওই মামলায় জামিনের শুনানী ছিল রোববার। আদালত শুনানী শেষে আসামির জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়।
এ ব্যাপারে দায়িত্বে অবহেলার কারণে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ছে বলে জানান শ্রীমঙ্গল সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র।
উল্লেখ্য, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে হর্ন ও মাইক বাজানো, আগুন জ্বালানো, বন্যপ্রাণীকে বিরক্ত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এর আগেও কিছু অসচেতন লোক লাউয়াছড়া বনে আইন অমান্য করে গানবাজনা, রান্নাসহ জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীকূলের ক্ষতি হয় এমন কাজ করলেও এই প্রথম বনের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলার অপরাধে মামলা দায়ের হয় এবং এ মামলায় আসামিকে জেলে পাঠানো হলো। এই ঘটনাকে ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বলে জানান পরিবেশের সাথে সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যপারে বন্যাপ্রাণী সংরক্ষণে নিয়োজিত শ্রীমঙ্গল স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এন্ডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ড লাইফ (সিউ) এর সুহেল শ্যাম জানান, দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বন হলো লাউয়াছড়া। বন রক্ষায় বন বিভাগের এ পদক্ষেপকে তারা সাধুবাদ জানান। তিনি আরও জানান, এতে ভবিষ্যতে বনের ভিতরে এমন ঘটনা ঘটাতে আর কেউ সাহস পাবেন না।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, শুধু বনে নয় বনের বাইরেও বন্যপ্রাণী হত্যা, নির্যাতন বা আটক করলে তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না।