টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের গর্ব। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি বৃহত্তম মিঠা পানির প্রাকৃতিক জলাধার। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায় বিস্তৃত এই জলাধারটির আয়তন প্রায় ১০০ কিলোমিটার। জীববৈচিত্র্যের এক বিশাল সমাহার এই হাওর।
এখানে যেমন দেশীয় পাখির ব্যাপক সমাবেশ রয়েছে, তেমনি শীতকালে বিপুল সংখ্যায় পরিযায়ী পাখির সমাবেশ হয়। পাখি পর্যবেক্ষকদের মতে, এখানে শীতে প্রায় ২০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। মিঠা পানির মাছের এক বিশাল ভাণ্ডার এই হাওর। রয়েছে এমন কিছু জলজ উদ্ভিদ, যা দেশের আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে এই হাওরের জীববৈচিত্র্য দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে, ক্রমেই ধ্বংস হচ্ছে এর প্রকৃতি ও পরিবেশ। তার একটি বড় কারণ হাওরের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা এবং অগণিত পর্যটকের সীমাহীন অত্যাচার।
টাঙ্গুয়ার হাওরের এই দুরবস্থার কারণে ১৯৯৯ সালে এটিকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। তা সত্ত্বেও ২০০০ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘রামসর সাইট’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। হাওরটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হয়ে যায়। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিশ্ব পরিসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা ঐতিহ্যবাহী এই হাওরটির দুরবস্থা আজ চোখে পড়ার মতো। ক্রমে প্লাস্টিক বর্জ্যরে ডিপোতে পরিণত হচ্ছে এই হাওর। মাছ ও জলজ প্রাণীরা এই প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে। পর্যটকবাহী নৌকায় এত উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয় যে আশপাশের মানুষ বিরক্ত হয়ে উঠেছে। এমন শব্দের মধ্যে পাখি থাকবে কী করে? গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত পানিদূষণ ও শব্দদূষণের দায়ে পর্যটকবাহী ২২টি নৌযানকে ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। কিন্তু এতে কি টাঙ্গুয়ার হাওরের দূষণ কমবে? রক্ষা পাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মিঠা পানির প্রাকৃতিক জলাধারটির জীববৈচিত্র্য?
টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের এমন এক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, যা কখনো তৈরি করা যায় না। তাই একে রক্ষা করতে হবে। এই হাওরে পর্যটকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পর্যটকদের এর পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। প্লাস্টিক দ্রব্যের দূষণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। অন্যান্য উপায়ে পানিদূষণ ও শব্দদূষণ যাতে না হয় তার জন্যও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সার্বক্ষণিকভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হবে।