কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
(১৩ জুলাই) বুধবার বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিলো কমলগঞ্জের ছতিয়া গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার কন্যা আয়েশা আক্তারের (১৮) এর। (মঙ্গলবার) রাতে হওয়ার কথা ছিলো গায়ে হলুদ। ইতিমধ্যেই বিয়ের কার্ড ছেপে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে স্বজন প্রতিবেশীদের।
কিন্তু বিয়ের পিঁড়িতে আর বসা হলো না আয়েশা আক্তার নামের এই তরুণীর, এর আগেই লাশ হতে হলো তাকে।
গরুর ধান খাওয়াকে কেন্দ্র করে আয়েশাকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিবেশী সিরাজ মিয়া ও তার ভাই-স্বজনরা। ঈদের আগের দিন শনিবার দুপুরে হামলার এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আয়েশা। সে স্থানীয় আহমদ ইকবাল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক এ শিক্ষার্থী। প্রতিবেশী মৃত কদ্দুস মিয়ার ছেলে সালাউদ্দিন সুমনের সঙ্গে বিয়ের কথা ছিলো তার। সুমন পেশায় কভার্ডভ্যান চালক।
মঙ্গলবার দুপুরে নিহত আয়েশার লাশ বাড়িতে পৌঁছলে পরিবারের স্বজন ও প্রতিবেশীদের গগনবিদারী কান্নায় ভারী হয়ে উঠে এলাকার পরিবেশ।
শনিবারের হামলায় আয়েশা আক্তারের মা কনিজা বেগমও আহত হন। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদে মৌলভীবাজার হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফিরেন তিনি। তার মাথায় রয়েছে একাধিক সেলাই। শরীরে রয়েছে অনেক আঘাতের চিহ্ন। কথা বলতে তার কষ্ট হচ্ছিলো। মেয়ের বিয়ের কথা বলতে গিয়ে বুকফাটা আর্তনাদে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।
জানা গেছে, ছতিয়া গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার ১ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে আয়েশা আক্তার দ্বিতীয়। কিছু দিন আগে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় একই গ্রামের মৃত জহুর মিয়ার ছেলে রিয়াজ মিয়া। বিয়ের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন আয়েশার পরিবার ও তার চাচা নওশাদ মিয়া। পরে গত ১ জুলাই প্রতিবেশী সালাউদ্দিন সুমনের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। বিয়ের দিন তারিখ ছিলো বুধবার (১৩ জুলাই)। এ নিয়ে আয়েশার পরিবারের উপর ক্ষুব্ধ ছিলো রিয়াজের পরিবার।
গত বৃহস্পতিবার আয়শা আক্তারের চাচা নওশাদ মিয়া স্থানীয় ভানুগাছ বাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে কোরবানির একটি গরু কিনেন। শনিবার দুপুরে খুঁটিতে রশি দিয়ে বাঁধা গরুটি ছুটে গিয়ে প্রতিবেশী রিয়াজের ভাইয়ের ধান খায়। এ নিয়ে নওশাদের পরিবারের সাথে কথা কাটাকাটির হলে এগিয়ে আসে আয়েশা। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সিরাজ, সামাদ ও রিয়াজ ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা আয়শাসহ নওশাদের পরিবারের ৫ জনকে কুপিয়ে আহত করে। হামলায় উভয়পক্ষের আহত হন ৮ জন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আহতদের মধ্যে আয়শা আক্তারসহ ৪ নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আহত আয়েশার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সুস্থ হয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার।
এ ঘটনায় রবিবার দুপুরে নওশাদ মিয়া বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করলে ওইদিন রাতে মামলার ১ ও ২নং আসামি সামাদ ও সিরাজকে আটক করে পুলিশ। পরদিন তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ২ আসামিকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।