ব্লগার অনন্ত হত্যা মামলার রায় ॥ ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ফয়সাল ভারতে গ্রেফতার

6

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এক পলাতক আসামি মহারাষ্ট্র ভারত থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফয়সাল আহমদ নামের ওই আসামিকে দেশটির কলকাতা পুলিশ গত ১ জুলাই বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ফয়সালের গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার খালপাড় তালবাড়ি এলাকায়।
একটি প্রতিবেদনে ফয়সালকে গ্রেফতারের এমন তথ্য দিয়েছে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। তারা জানিয়েছে, ফয়সালকে ১ জুলাই বেঙ্গালুরুর বোম্মনাহাল্লি এলাকার কলকাতা পুলিশ প্রেফতার করে। পরে ৩ জুলাই তাকে কলাকাতায় নিয়ে আসা হয়। আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ফয়সাল ভারতে অবস্থান করছেন বলে গত জুন মাসের শুরুর দিকে তথ্য পান বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। পরে ফয়সালের ভারতীয় মোবাইল নাম্বার দিয়ে কলকাতা পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বেঙ্গালুরু থেকে তাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার জানায়, ফয়সালকে শিগগিরই বাংলাদেশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, কলকাতা পুলিশ ফয়সালকে জেরা করেছে। জেরায় তিনি জানিয়েছেন, তারই নেতৃত্বে আল-কায়দার আসাম মডিউল নিজেদের ঘাঁটি মজবুত করেছে বরাক উপত্যকায়। অনন্ত হত্যাকাণ্ডের সময়ে ফয়সাল ছিলেন ডাক্তারির ছাত্র। সে সময়ই জড়িয়ে পড়েন আল-কায়দার ছায়া সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)-র সঙ্গে।
দৈনিকটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ফয়সালের কাছে যে পাসপোর্ট মিলেছে, সেখানে রয়েছে ভারতের মিজোরামের ঠিকানা। ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগায় করেছেন বেঙ্গালুরু থেকে। তার ভোটার কার্ড শিলচরের। সেখানে তার পরিচয় শাহিদ মজুমদার নামে। পুলিশ জানায়, জেহাদি কার্যকলাপের অভিযোগ স্বীকার করে ফয়সাল জানিয়েছেন, ২০১৫ সালেই তিনি শিলচরে পালিয়ে যান। তবে ব্লগার অনন্ত হত্যায় জড়িত থাকার কথা তিনি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার নুরানী আবাসিক এলাকায় নিজ বাসার সামনে কুপিয়ে খুন করা হয় অনন্ত বিজয় দাশকে। তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করতেন। এ ছাড়া ‘যুক্তি’ নামের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পত্রিকায় জড়িত ছিলেন। অনন্ত খুনের পর তার বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে নগরীর বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করেছে। প্রথমে পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। এরপর মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির কাছে। ২০১৭ সালের ৯ মে সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ ও ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এ মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ২৪ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীণ অনন্ত বিজয় হত্যা মামলার ৪ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেন। এ চারজন হচ্ছে- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ উরফে হারুন অর রশিদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ।
মামলায় নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান উরফে ফারাবী সাফিউর রহমানকে খালাস দেয়া হয়। এ ছাড়া সম্পূরক অভিযোগপত্রে নাম আসা ছয়জনের মধ্যে ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ৪ জনের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক ছিলেন। এবার ফয়সাল গ্রেফতার হলেন ভারতে।