বন্যায় অর্থনৈতিক ক্ষতি বেশি হলেও, মৃত্যু কম হয়েছে – পরিকল্পনামন্ত্রী

6
জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত সিলেট অঞ্চলে ঘন-ঘন বন্যার কারণ: স্থায়ী সমাধানে করণীয় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বন্যায় অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক বেশি হলেও তুলনামূলক জীবনহানি কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
সোমবার (৪ জুলাই) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘সিলেট অঞ্চলে ঘন-ঘন বন্যার কারণ: স্থায়ী সমাধানে করণীয়’ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, বন্যায় জীবনহানি তুলনামূলক কম হয়েছে, যে পরিমাণ স্থাপনা এবং অবকাঠামো ধংস হয়েছে। মানুষের মৃত্যু কম হয়েছে এটা ভালো বিষয়, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। গত ৩০ বছরে সুনামগঞ্জের যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে, তা সব শেষ হয়ে গেছে। কোনো সড়ক অক্ষত নেই, এমনকি সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক কয়েক জায়গায় ধংস হয়ে গেছে। গ্রামের ছোট ছোট সড়কগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা হয়তো স্কুল, কলেজ, হাট বাজার পুননির্মাণ করতে পারবো, কিন্তু সড়ক নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন কাজ সব দিক থেকে। আমি শঙ্কি এটা নিয়ে যে, হাওর এলাকায় আমরা যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছিলাম, তা আর কবে ফিরে পাবো। আমার জীবদ্দশায় ফিরে পাবো কি না, আমার সন্দেহ আছে।
হাওরের মানুষের জীবন যাত্রার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, শহরের মানুষের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, হাওরের মানুষের অবধারিত ভাগ্য এটা নয় যে, তারা সারাজীবন পানির নিচে বসবাস করবে। তারা মাছ ধরবে, খাবে, পুথি পড়বে আর ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে মারা যাবে, এটাই তো তাদের ভাগ্য নয়। দেশের মানুষের যে পরিবর্তন এবং উন্নয়ন হচ্ছে, যে উন্নয়নের তারাও হকদার। গ্রামের এবং হাওরের মানুষদেরও উন্নত জীবন দেওয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, গত ৩০-৩৫ বছরে হাওরাঞ্চলে যে পরিমাণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে, এই একটা-দুইটা বন্যায় তার ক্ষতি ১০০ শতাংশের এক ভাগও হবে না। এমন বিরল (বন্য) ঘটনা মাঝে মধ্যে হয়। ভবিষ্যতেও হবে, কিন্তু আমাদের এটা মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রথমে ত্রাণ, তারপর নির্মাণ, আমরা সেই বিষয় বিবেচনা করেই কাজ করছি।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান হোসেন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিম প্রমুখ।
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ।
বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান হোসেন বলেন, এবারে এত বড় বন্যা হবে, এটা আমাদের কারও ধারণা ছিল না, তাই আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। আগামী বছরে আবারও এমন বন্যা হতে পারে, তাই আমাদের আগে থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসন করা হবে। বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের গাছপালা কমে গেছে এটা আমি স্বীকার করি। বন্যা থেকে রক্ষা পেতে নদ-নদী, জলাশয় এবং হাওরগুলো আমাদের খনন করতে হবে।