স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমার অনেক এলাকা এখনও পানিবন্দি রয়েছে। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ গত ১৯ দিন ধরে। প্রধান সড়কে হাঁটুর ওপর পানি থাকায় সড়কটির ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে পথচারীরা। যারা সে পথ দিয়ে আসা-যাওয়া করে, তারা ওই এলাকারই বাসিন্দা। নিজ নিজ বাসাবাড়িতে যেতে বাধ্য হয়ে ওই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এমন ভোগান্তিতে আছেন দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি এলাকার সহস্রাধিক পরিবার। এর সঙ্গে প্রায় ১৫০টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুরবস্থায় আছেন ব্যবসায়ীরাও।
দক্ষিণ সুরমা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর সড়ক, লাউয়াই সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চণ্ডীপুল সড়কের আগপর্যন্ত জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। বঙ্গবীর সড়কে কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি। এ সড়কের দুই পাশের প্রায় ১৫০টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ ছাড়া ধরাধরপুর, মোমিনখলা, ২৭ নং ওয়ার্ডের গোটাটিকর কিষণপুরসহ বেশ কিছু এলাকা, রায়েরগাঁও, লাউয়াইন, কামুসনা, আলমপুর ও তেতলী এলাকার ঘরবাড়ি এবং সড়কে হাঁটুসমান পানি রয়েছে। চণ্ডীপুল এলাকার দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণেও পানি দেখা গেছে। বঙ্গবীর সড়কের জ্বালানি তেলের পাম্প এবং চণ্ডীপুল মোড়ে জ্বালানি তেলের আরেকটি পাম্প পানিতে তলিয়ে থাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ আছে।
এদিকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গণেও প্রায় হাঁটু পর্যন্ত পানি দেখা গেছে। এতে রেলস্টেশনে নামার পর গন্তব্যে যেতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক যাত্রীকে মালপত্র নিয়ে ময়লা পানি মাড়িয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
বঙ্গবীর রোডের মিতালি অটোমোবাইল নামের একটি দোকানে যানবাহনের সরঞ্জাম বিক্রি করেন সামসুল ইসলাম (৪৭)। তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। কিন্তু এমন অবস্থা কখনোই হয়নি। চলতি মাসের ১৫ তারিখে সন্ধ্যায় হঠাৎই সড়কে পানি উঠে দোকানে প্রবেশ করে। সে সময় মেঝেতে থাকা মালামাল তুলে কিছুটা ওপরে রাখা হয়েছিল। পরদিন পানি বেড়ে হাঁটুসমান হয়ে যায়। সে সময় তেমন পাত্তা দিইনি। এর পরদিনই পানি বেড়ে বুকসমান হয়ে যায়। এতে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে থাকা প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল ভেসে গেছে। এখন পথে বসার উপক্রম।
ধরাধরপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুর রউফ (৩৬) বলেন, এলাকায় অনেকেই অপরিকল্পিতভাবে বাসাবাড়ি বানিয়েছেন। এতে পানি নামার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে এবার পানি নামতে পারছে না। এর আগে বৃষ্টির সময় কিছুটা পানি জমলেও দ্রুতই সেগুলো নেমে যেত। তবে এবার ১৫ দিন হয়ে গেলেও পানি নামছে না। গতকাল মঙ্গলবার বৃষ্টি হওয়ায় পানি আরও বেড়েছে।
একইভাবে কথা বললেন কিষণপুর এলাকার মনমন পাল। তিনি বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ২০ দিনের মতো হবে কিষণপুর এলাকায় পানি ডুকে আমরা পানিবন্দি রয়েছি। এ পাড়ায় নেই রাস্তা-ঘাট ও পানি নামার ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এখন পর্যন্ত পানি না নামায় আমরা দুচিন্তায় রয়েছি। এছাড়া পানি থেকে দুর্গন্ধ ঝড়াচ্ছে।
মোমিনখলা এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, এলাকাগুলোতে সুরমা নদীর পানি উপচে প্রবেশ করেছিল। পানিগুলো সাধারণত জৈন্তারখাল হয়ে কুশিয়ারা নদীতে নামে। কুশিয়ারা নদীর পানি না কমায় এলাকার পানি নামছে না। অন্যদিকে মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে পানি আরও বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকার জৈন্তার খাল, ছড়া ও বক্স কালভার্টে ময়লা-আবর্জনা জমে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এসব ময়লা-আবর্জনা স্থানীয় ব্যক্তিরাই বিভিন্নভাবে এসব খালে ফেলেছিলেন। এতে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন ছড়া, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন করছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দল সেদিকে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। দক্ষিণ সুরমার ওই এলাকাগুলোতেও পরিচ্ছন্ন করা হবে। ছড়া খালের বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ সুরমার কিছু এলাকা সিটি করপোরেশনে নতুন করে অধিভুক্ত হয়েছে। সেসব এলাকা ঘরবাড়িগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে কি না, তদারকি করা হবে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের নদ-নদীর পানি সুনামগঞ্জ দিয়ে নামে। সুনামগঞ্জে পানি বেশি থাকায় পানি নামতে সময় লাগছে।