বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের সব এলাকা থেকেই ধীরে ধীরে পানি নামছে। কিন্তু এখনো সব নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সঙ্গে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র।
রাস্তাঘাট সব ভেঙে গেছে। অনেকের ঘর পড়ে গেছে। পুকুরের মাছ চলে গেছে। জমিতে আউশ ধানসহ বর্ষাকালীন সবজির কোনো চিহ্নই নেই। ঘরে খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। সরকারি ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ খুবই কম। ফলে দুর্গত এলাকার মানুষ এখনো চরম দুঃখ-কষ্টের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছে।
বৃহত্তর সিলেট চলতি মৌসুমে দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বন্যা অনেকটাই দীর্ঘ হয়। বন্যার তীব্রতাও ছিল অনেক বেশি। উজান থেকে আসা পানির তোড়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেক এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ গোটা উত্তরাঞ্চলই বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো বন্যাবিষয়ক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ১৭ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত বন্যার মধ্যে মোট ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা অববাহিকায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তিস্তা, ধরলাসহ আরো অনেক নদীতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙছে ফসলি জমিও। তাই বন্যার পানি কমলেও আশ্রয়হীন-খাদ্যহীন মানুষের চোখে-মুখে চরম অনিশ্চয়তা।
বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্য সমস্যা। ঘরে ঘরে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগী। শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। সেই সঙ্গে আছে সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী। বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট রূপ নিয়েছে। নলকূপগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষ নলকূপের পানিও পান করতে পারছে না। বেশির ভাগ বাড়িঘরে ফুটিয়ে পানি পান করার মতো অবস্থা নেই। তাই দুর্গত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবা বাড়ানো প্রয়োজন।
বন্যার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরূপণ করা যায়নি। ঘরবাড়ি, ফসল, পুকুরের মাছ, গবাদি পশু ইত্যাদি ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি গ্রামীণ রাস্তাঘাটের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ অনেক। বন্যার প্রকোপ ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে খননের মাধ্যমে নদীগুলো নাব্য করার কোনো বিকল্প নেই। অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই আমাদের তা করতে হবে। তার আগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।