একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার দুপুরের শহরের পুরাতন বাস স্টেশনে একটি রেস্টুরেন্টের সম্মেলন কক্ষে জেলা সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। এ সময় সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নূরুল ইসলাম নূরুল। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা চলাকালীন ভীতিকর পরিস্থিতিতে সরকারি কোনও সহযোগিতা ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটেছে বানভাসি। বন্যায় সরকারি-বেসরকারি ভবন, স্কুল কলেজ, হাসপাতাল তো বটেই, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিটি বহুতল ভবন পরিণত হয় এক একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। সেখানে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন দুর্গতরা। এমন পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকায় খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেওয়ার পরও সরকার ও প্রশাসন বলতে গেলে নির্বিকার ছিল। এই মহাদুর্যোগে একাই লড়াই করছেন বানভাসিরা। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চরম সংকট। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হলেও ছিল না প্রশাসনিক কোনপ্রকার নজরদারি। এতে আরো বলা হয়, ত্রাণ বোঝাই নৌযান দেখলেই দলে দলে ছুটে যাচ্ছেন শত শত অভুক্ত বন্যা দুর্গতরা। ক্ষুদার তাড়নায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ঝাপ দিতেও দ্বিধা করছেন না তারা। একবেলা খাবারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ত্রাণের অপ্রতুলতায় হয় খালি হাতে না হয় খালি পেটে ফিরতে হচ্ছে তাদেরকে। বিএনপির দাবি, দেশের এমন মহাদুর্যোগে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয় করলেও সুনামগঞ্জের দুর্গত, দুর্দশাগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের জন্য মাত্র ৬৭৫ মেট্রিকটন চাল আর নগদ এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এই মুখ রক্ষার বরাদ্দ বানভাসি মানুষের কোনও উপকার আসবে না। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও বিকল্প দেখছে না। এতে আরো বলা হয়, এই মহাদুর্যোগেও জনগণের করের টাকায় পরিচালিত সরকারি প্রশাসন সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর ঊর্ধ্বে উঠে কাজ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত জেলা প্রশাসনের প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের দেওয়া বক্তব্য শোনে আমরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছি- তিনি একজন সরকারি কর্মচারী নাকি সরকারি দলের জেলা কমিটির কোনও নেতা। এই দুর্যোগময় মুহূর্তে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে দুর্গত মানুষের পাশে ব্যাপক ভিত্তিতে দাঁড়ানো সুযোগ তৈরি করার পরিবর্তে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বার বার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের গুণকীর্তন করেছেন। বলেছেন, বিএনপিসহ অন্য কোন রাজনৈতক দল মাঠে না থাকায় তাদেরকে দুর্যোগ মোকাবেলায় আহ্বান জানাননি তিনি। জেলা প্রশাসকের বক্তব্য অসত্য দাবি কওে, সেটি প্রত্যাখ্যান ও তার দলীয় সংকীর্ণ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় বিএনপি। একইবভাবে বন্যায় মৃত্যু নিয়ে জেলা প্রশাসক যে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি করে দলটি। জেলা বিএনপি জানায়, ভয়াবহ বন্যা শুরুর পর থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আগামীর রাষ্ট্র নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্তরিকতার সাথে দুর্গতদের উদ্ধার, ত্রাণ, রান্না করা খাবার ও জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করে চলছেন। প্রতিটি উপজেলায় আমাদের নেতাকর্মীরা ব্যক্তিগত ও দলীয় উদ্যোগে বন্যা দুর্গতদের সেবায় নিয়োজিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুর্গতদের পাশে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার নির্দেশে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী দুর্গতদের পাশে রয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য সরকারের থেকে বিএনপি বেশি করেছে। জেলা বিএনপির দাবি, এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কিছুতেই আন্তরিক ছিল না। এই অঞ্চলের মানুষের প্রতি তাদের যে সহানুভূতি দেখানো প্রয়োজন সেটা দেখাতে তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। বন্যা মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যতটুকু কার্যকরী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন সেটা করতে তারা করেননি। এমতাবস্থায় দুর্গত এলাকার মানুষের বভিষ্যত নিয়ে জেলা বিএনপি খুইই উদ্বিগ্ন। কারণ বন্যার পর দুর্গত প্রতিটি মানুষকে নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে। এতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সরকারি অর্থ। কিন্তু সরকার যে এই অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে তাদের কর্মকাণ্ড দেখে আমরা তার ইঙ্গিত পাচ্ছি না। বরং এই অঞ্চলের মানুষকে বানের পানিতে ডুবন্ত রেখে তারা পদ্মসেতু উদ্বোধনের আনন্দ-উল্লাসে মত্ত। প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে এসে সুনামগঞ্জ ঘুরে গেলেন, এটাতে দুর্গত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। মানুষের এখন দরকার সহায্য, সহযোগিতা এবং ঘুরে দাঁড়ানোর পর্যাপ্ত উপকরণ। আর এই সহযোগিতা কেবল সরকারের পক্ষেই সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ এই দুর্যোগে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সরকারকে এখনই এগিয়ে আসার দাবি জানায় বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সহ-সভাপতি এডভোকেট মল্লিক মঈন উদ্দিন সোহেল, নাদির আহমদ, এডভোকেট শেরেনূর আলী, সেলিম আহমদ, আবুল কালাম, এডভোকেট জিয়াউর রহিম শাহিন, জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মনসুর শওকত। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মামুনুর রশিদ কয়েস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মুনাজ্জির হোসেন, জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।