সকলের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠুক একটি সুখী-সুন্দর মাদকমুক্ত সমাজ

61

ইমতিয়াজ রহমান ইনু :

আলো হতে আঁধারে সামিল হওয়া সহজ, কিন্তু আঁধার ভেদ করে আলোতে আসা কঠিন? আজ আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস। যুবক জাতির ভালো কাজে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখে জাতি কতো পিতা মাতার সন্তান মাদক নিয়ে জীবনকে ধ্বংস করেছে তাদের মতো মাদকাসক্ত তরুণের গল্প, এমন গল্প আছে যা শুনে মানবজাতি পশম চমকে উঠে। কয়েকদিন আগে পত্রিকার পাতায় অনেকে পড়েছেন নেশা টাকার জন্য মাদকাসক্ত তরুণ নিজের আপন গর্বধারিণী মাকে চিরস্তরে না ফেরার দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। “বিষ শুধু একজনকে ধ্বংস করে কিন্তু মাদক সমগ্র সমাজকে ধ্বংস করে” এই বাণীর সাথে আমরাও জোড় গলায় একমত পোষণ করি। সকালে আকাশ থেকে খুব বৃষ্টি নামছে নিদ্রার সময়টা শেষ বাসা থেকে সকালের চা-নাস্তা করে সিলেট জেলা আনসার অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছি মোবাইল ফোনে রিং এলো এনজি ইপসা অফিস ঢাকা থেকে ১৫ জুনের ভিতরে দুইজন মাদকাসক্তকে ফ্রি চিকিৎসার জন্য ঢাকা সাভার বাংলাদেশ মাদকাসক্ত চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র বারাকায় পাঠাতে হবে।
আনসার অফিসে যাওয়া বাতিল হয়ে গেল। বাসা থেকে বাহির হয়ে গেলাম ছাতা নিয়ে অবস্থান করলাম সিলেট শহরের আলীয়া মাদরাসা মাঠে মাদকের মরণ ছোবলের আক্রান্ত যুবক অক্টোপাসের মতো চটপট করছে মাদক। মাদক তাদের ঘিরে ফেলেছে। কয়েকজন যুবক মাদকের ভয়াবহ থাবায় আক্রান্ত তাদের বসবাসের ঠিকানা সিলেট নগরীর রাস্তার পাশে ফুটপাতে। প্রতিনিয়ত ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, ডেন্ডি, প্যাথিলিন শিরার মাধ্যমে নিয়ে নেশা করে। নেশার টাকার জন্য তাদের পেশা চুরি ও টোকাই পেশা কয়েকজনের সাথে কাউন্সিল করলাম চিকিৎসায় যাওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন অযুহাত দেখাল। চলে আসলাম সিলেটের ঐতিহাসিক ক্বীন ব্রিজ এলাকায় কথা বললাম আরো কয়েকজন মাদকাসক্তদের সাথে কোনো সাড়া পেলাম না। ছুটে গেলাম রেল ষ্টেশনে পেয়ে গেলাম ছদ্দ নামে তরুণ রাজিবকে প্লাটফর্মে নেশায় বোধ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুম থেকে জেগে তুললাম রাজিবকে? নিয়ে আসলাম ফুটপাতে চায়ের দোকানে চা খেয়ে নিরিবিলি পরিবেশে বসে কথা বলতে সে রাজি হল চিকিৎসায় যেতে তার মাধ্যমে আরেকজন মাদকাসক্তকে চিকিৎসায় যেতে রাজি হলো। ঢাকা যাওয়ার জন্য রাতে গাড়ির টিকেট নিলাম। মাদক পুনর্বাসনের উদ্যোগে যাত্রা। অন্যজন গাড়িতে উঠে সিটে ঘুমিয়ে গেল। রাজিবের মাদকাসক্ত জীবনের আসার গল্প শুনতে লাগলাম।
সিলেট বিভাগের কোন এক জেলায় ১৯৯০ সালে জন্ম গ্রহণ করে রাজিব। ৪ বছরে বয়সে ছোট বোনের জন্মের দিনে মা মারা যান ও ছোট বোনও মারা যায়। কয়েকটা দিনের পর বাবা বিয়ে করে সৎ মাকে ঘরে আনেন। বাবা দিন মজুরী কাজে চলে যাওয়ার পরে সৎ মা আমার অত্যাচার শুরু করে বাবাকে বলে কোনো সমাধান হতো না। দুঃখ যন্ত্রনা অত্যাচার সৎ মার না সইতে পেরে দশ বছর বয়সে বাড়িঘরে ছেড়ে চলে আসলাম সিলেট রেলষ্টেশন এলাকায়। ঠিকানা হলো রেলষ্টেশন। প্লাটফর্মে দিনের বেলা টোকাই রাতে বেলা প্লাটফর্মে ঘুমানো স্থানটি পুরাতন হওয়ায় সুবাদে নেশা আসক্ত আমার বয়সের কয়েকজন খারাপ বন্ধু। বন্ধুদের ছলে পড়ে তাদের সাথে চুরির পেশা শিখলাম তাদের দেখাদেখি।
শুরু হয় নেশার জগৎ তারপর থেকে নেশা আর নেশা। এভাবে গল্প শুনে চলে আসি মাদক নিরাময় পুনর্বাসন বারাকায়। দুইজনকে চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করে তাদের কাছ থেকে বিদায় চলে আসি। আসুন আমরা সবাই মাদকাসক্ত যুবক যুবতীদের ঘৃণা না করে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে পথের আসার উৎসাহ দিন। নিজের পরিবারে স্বজন হিসেবে গ্রহণ করে যেভাবেই পারি না কেন? তাদের আলোর পথে চলার সুযোগ করে দিন। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠুক একটি সুখী-সুন্দর মাদকমুক্ত সমাজ।