বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল। বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের নির্মাতা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার বাহাত্তরতম বর্ষ পেরিয়ে আজ পা রেখেছে ৭৩তম জন্মদিনে। গত শতাব্দীর মধ্য ভাগে, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রগতিবাদী ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে আহূত কর্মী সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। বস্তুত এটিই ছিল পাকিস্তানের সরকারী দল মুসলিম লীগ বিরোধী প্রথম কার্যকর বিরোধী দল। ১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো দিকপাল নেতাদের সঙ্গে মুসলিম লীগের দূরত্ব, তরুণ শেখ মুজিব এবং তাঁর সহকর্মীদের দ্রোহ ও আত্মত্যাগ পরিস্থিতির ঐতিহাসিক পরিণতি নির্ধারণ করে দেয়। এই বাস্তবতা থেকেই উৎসারিত হয় আওয়ামী লীগের মতো একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল তথা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অপরিহার্যতা। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সংগ্রামের মধ্যে জন্ম আওয়ামী লীগের। ভাষা আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, মুসলিম লীগ বিরোধী ২১ দফা প্রণয়ন ও যুক্তফ্রন্ট গঠন, চুয়ান্নর নির্বাচনে বিজয় ও মুসলিম লীগের ভরাডুবি প্রভৃতি ঘটনার ভেতর দিয়ে পঞ্চাশের দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব বাংলার রাজনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। ষাটের দশকে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা শাসক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, দুই অর্থনীতির তত্ত্বপ্রচার এবং ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবের উত্থাপিত ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি হয়ে ওঠে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ম্যাগনাকার্টা। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকা দলটিকে এই অঞ্চলের একক বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত করে। শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু উপাধি পেয়ে পরিণত হন অবিসংবাদিত জাতীয় নেতায়। অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের ভাষণ (যা আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ), বাংলার মানুষের অকাতরে আত্মদান সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের সকল পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়। পাকিস্তানী জান্তা ২৫ মার্চ রাতে বাঙালিদের ওপর কাপুরুষোচিত বর্বর হামলা তথা গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাঁর আহ্বানে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় দেশ। বিশ্ব মানচিত্রে সগৌরবে স্থান করে নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন প্রিয় মাতৃভূমিতে। শুরু করেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের দুরূহ কর্মযজ্ঞ। দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু হত্যা করে জাতির পিতাকে সপরিবারে।
১৯৯৬ পর্যন্ত টানা একুশ বছরের স্বৈরশাসন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চারিত্র বৈশিষ্ট্যকেই পাল্টে দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু ও সমাপ্ত করে। ২০১৪ ও ২০১৯ সালেও জনগণের রায়ে টানা তৃতীয়বার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় দলটি। শেখ হাসিনা টানা ৪০ বছর দলের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পিতৃ গৌরবকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইতোমধ্যে দলটির হাত ধরে পালিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, যা অত্যন্ত গর্বের ও গৌরবের। বাস্তবায়িত হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আওয়ামী লীগের ৭৩তম জন্মদিনে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।