কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীসহ জনগণের আন্দোলন ও চাপে বাধ্য হয়েই এক/এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে মুক্তি দিয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে সব সময় উজানে নাও ঠেলেই চলতে হয়েছে। জনগণই হলো আমাদের শক্তি। তাই কারও কাছে কোন দিন মাথানত করিনি, জীবন ভিক্ষা চাইনি। আমি পরিবার থেকে, বাবার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে এটা শিখেছি যে, কারও কাছে বা কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না।
শনিবার গণভবনে শেখ হাসিনার কারামুক্তির ১৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তাঁদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের কোন উন্নয়ন ও অর্জনকে দেশের কিছু মানুষ কেন মেনে নিতে পারছে না এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে কেন একদল মানুষ মনে কষ্ট পায়? কেন তারা কোন অর্জনকে বাংলাদেশের অর্জন বলে মেনে নিতে পারছে না?
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে এত বাধা, তবুও নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি। তারপরও কিছু মানুষ এটিকে অর্জন হিসেবে নিতে পারে না। কেন তাদের এই দৈন্য? বিনা পয়সায় টিকা দিয়েছি, বিনা পয়সায় যাদের ভ্যাকসিন দিয়ে তরতাজা করেছি, তারাই এখন সমালোচনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক উন্নত দেশে প্রবৃদ্ধি যখন নেতিবাচক, তখন আওয়ামী লীগের কারণে বাংলাদেশ মহামারীর সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশের বেশি অর্জন করতে পারে এবং তাঁর সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটও দিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে সব প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে, কেননা একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য তারা সর্বদাই তৎপর রয়েছে।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেকার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে, যা প্রতিটি নেতাকর্মীর মনে রাখতে হবে এবং কোন লোভের জন্য দেশকে কারও হাতে তাঁরা তুলে দিতে পারে না। আওয়ামী লীগকে সব সময় উজানে নাও ঠেলেই চলতে হয়েছে। জনগণই হলো আমাদের শক্তি। তাই কারও কাছে কোনদিন মাথানত করিনি, জীবন ভিক্ষা চাইনি। আমি পরিবার থেকে, বাবার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে এটা শিখেছি যে, কারও কাছে বা কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না।
‘এক/এগারো’র সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিজের কারান্তরীণ সময়ের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতবার গ্রেফতার হয়েছি, ততবারই নেতাকর্মীদের উদ্দেশে চিঠি দিয়েছি, চিঠির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নিদের্শনা দিয়েছি, দেশবাসীকে চিঠি দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা সব সময় ঠিক থাকেÑ এটা বাবার সময়ও দেখেছি।
দলের দুঃসময়ে তৃণমূল নেতারা ঠিক থাকে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন ও চাপে বাধ্য হয় আমাকে মুক্তি দিতে। সে সময়ে মাত্র ১৫ দিনে তাঁর মুক্তির জন্য ২৫ লাখ সই সংগ্রহ করা হয়। যাতে সে সময়কার সরকারও অবাক হয়। তিনি বলেন, এটাই আওয়ামী লীগ, জনগণই এর শক্তি। আর বিএনপির ক্ষেত্রে তাদের জন্মই হলো আজন্ম পাপ। জনগণ বিএনপির শক্তি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন। এ স্বাধীনতা বৃথা যেতে পারে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাব। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে যাব। যে যাই বলুক, আমরা আমাদের কাজ করে যাব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পর্যন্ত যেন সুফল পায় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ১০০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা করেছি।
’৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর প্রথমবার দেশে ফিরে আসার সময়ের বর্ণনা তুলে ধরে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে ফেরার পর ১৯৮৩ সালে এ্যারেস্ট করা হয়, ডিজিএফআই অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কারও কাছে কোন দিন মাথানত করিনি, জীবন ভিক্ষা চাইনি। কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত আমি করি না।
নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে সব সময় উজানে নাও (নৌকা) ঠেলে চলতে হয়েছে। জেলে বসে দেশ কিভাবে চালাব, দল কিভাবে চালাব- সেসব লিখে রেখেছিলাম। কিভাবে দেশের উন্নয়ন করব, সেসব পরিকল্পনা লিখে রাখি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা এখন সরকারে। জনমানুষের কল্যাণই আমরা বুঝি, আর সেটাই করে যাচ্ছি। আজ দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত। মানুষ শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে সঠিকভাবে। আমরা একটি বাজেট দিয়েছি। করোনাকালে উন্নত দেশেরও জিডিপি মাইনাসে। অথচ আমরা সেটি পাঁচ ভাগের ওপরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন। এ স্বাধীনতা বৃথা যেতে পারে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাব। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে যাব। যে যাই বলুক, আমরা আমাদের কাজ করে যাব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম পর্যন্ত যেন সুফল পায় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ১০০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা করেছি।
গণভবনে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুভেচ্ছা বক্তব্যে শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবসকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস বলে আখ্যা দেন তিনি। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস। এ দিন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত করেছে। শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাঙালী ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে, দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তোমার মিথ্যাচার কর, আমরা কাজ করে জবাব দেই।’
এর আগে শনিবার দুপুর পৌনে ১২টায় কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। প্রথমে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), তাঁতি লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ এবং গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান।
প্রসঙ্গত, ‘এক/এগারো’-এর অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। কারাগারে থাকাকালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় চিকিৎসার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর মুক্তির জোরালো দাবি ওঠে। সে সময় ক্রমাগত অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন, আপোসহীন মনোভাব এবং অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।