দেশে চালের উৎপাদন, বিপণন ও মজুদ সন্তোষজনক। তারপরও দাম বাড়ছে চালের। উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি থাকলে পণ্যের দাম কমবে- অর্থনীতির এ নিয়ম যেন বর্তমান চাল ও নিত্যপণ্যের বাজারে খাটছে না। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ী, মিলার, আড়তদার, পাইকার, কর্পোরেট ব্যবসায়ীসহ কিছু প্রতিষ্ঠান ধান কিনে চাল মজুদ করে গ্রাহকদের বাড়তি দামে চাল সরবরাহ করছে। সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় তাদের একটি পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে। আগে মিলার, আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন তাদের পাশাপাশি নামী-দামী বিভিন্ন কোম্পানিও চালের ব্যবসায় নেমে পড়েছে। ফলে, খুচরা ও মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে বিপাকে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তেমনটি আগে কখনও পরিলক্ষিত হয়নি। সন্দেহ নেই, এই অতিরিক্ত মজুদদারির কারণেই বেড়ে চলেছে চালের দাম।
সিন্ডিকেট ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা অধিক মুনাফার লোভে এই খাদ্যশস্য গুদামে মজুদ রাখে। যদিও সংবাদ প্রকাশের পর ইতোমধ্যে তড়িঘড়ি করে কাবিখার চাল উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য সরবরাহে ভারসাম্য আনয়ন, আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত নানা প্রকল্প ঘিরে অসঙ্গতির এমন খবর নতুন নয়। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ওএমএস- এগুলো অতিপ্রয়োজনীয় গণমুখী কর্মসূচী। অনিয়ম-দুর্নীতিতে এই কর্মসূচীগুলো বরাবরই সমালোচিত হয়। যাদের ব্যর্থতা ও লোভ-লালসার কারণে রাষ্ট্রের বরাদ্দকৃত সম্পদের অপচয় ও সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। কেননা, বাজারের অসাধু সিন্ডিকেটের পাশাপাশি যদি সরকারী প্রকল্পের বিভিন্ন বরাদ্দেও মজুদদারি সৃষ্টি হয়, তাহলে অসহায় মানুষ ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। পক্ষান্তরে পকেট ভারী হবে কতিপয় অসাধু আমলা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
ভরা মৌসুমে চাল সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভিযান ও চাল আমদানির ঘোষণায় ইতোমধ্যে মিলাররা বাজারে চাল ছাড়তে শুরু করেছে। করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট, মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি, বাজারে অসাধু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রভৃতি বিষয়গুলো অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে মোকাবেলা করা জরুরী। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে শীঘ্রই চালের বাজার স্থিতিশীল হবে বলে সকলের প্রত্যাশা।