কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র হজ¦ পালনের জন্য সৌদি আরবগামী বাংলাদেশী হজ¦যাত্রীদের হজ¦ পালনের পাশাপাশি দেশের মর্যাদা রক্ষা ও জনগণের কল্যাণে দোয়া করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার হজ¦যাত্রীদের হয়রানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। হজ¦ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে এর প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। তবে হজ¦যাত্রীদের সৌদি আরবের আইন এবং হাবের নিয়ম মেনে চলতে হবে। হজ¦ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। আর দেশের উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা তা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য দোয়া করবেন।
শুক্রবার আশকোনা হজ¦ ক্যাম্পে ‘হজ¦ কার্যক্রম ২০২২’-এর উদ্বোধন শেষে তিনি এ পরামর্শ দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হজ¦ ক্যাম্পের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী হজ¦যাত্রীদের কাছে দেশের সার্বিক মঙ্গল কামনায় দোয়া কামনা করেন, যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যে অগ্রযাত্রা তা যেন অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, যাঁরা হজ¦ পালন করতে যাচ্ছেন তারা যেন সুষ্ঠুভাবে হজ¦ পালন এবং ইবাদত বন্দেগি করতে পারেনি তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। ইসলামকে ‘শান্তির ধর্ম’ এবং ‘সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এর সম্মান রক্ষা এবং হজ¦ পালনকালে সৌদি আইন মেনে চলার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকার জন্যও সম্মানিত হজ¦ যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী এবং ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান এবং হজ¦ এজেন্সিজ এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মোঃ শাহাদত হোসেন তসলিমও বক্তৃতা করেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’র মাধ্যমে আমরা আমাদের হজ¦ ব্যবস্থাপনাকে আরও প্রযুক্তি নির্ভর করতে সক্ষম হয়েছি। ইমিগ্রেশন ঢাকাতেই হয়ে যায়, সেখানে কোন হয়রানি হয় না। মালপত্রও যাতে যথাযথ স্থানে পৌঁছে যায় সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডেডিকেটেড বিমান সার্ভিস দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতার বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি ইসলামের মূল মন্ত্র যে ‘শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা’, সে সম্পর্কে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তাঁর দেয়া ঐতিহাসিক বেতার ভাষণের কিঞ্চিত অংশ উদ্ধৃত করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর ইসলাম। যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সুষ্ঠু হজ¦ ব্যবস্থাপনায় ‘হজ¦ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১’ প্রণয়ন করেছে। যাতে হজ¦যাত্রীরা কোন রকম হয়রানি ছাড়া হজে¦ গিয়ে হজ¦ পালন করতে পারেন। আজকের উন্নত হজ¦ ব্যবস্থাপনার অনেক কিছু তাঁর নিজস্ব চিন্তা-চেতনার ফসল। অতীতে বিভিন্ন সময় ওমরাহ এবং হজ¦ পালন করতে গিয়ে তিনি মিনা’তে হাজীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজ চোখে হাজীদের যে সব সমস্যা দেখেছেন সে সবই পরবর্তীতে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল হজ¦ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করা। যা ধাপে ধাপে আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি এ জন্য সৌদি বাদশাহ এবং ‘দুটি বড় মসজিদের খাদেম’ যখনই যিনি ছিলেন এবং যুবরাজদের আমাদের হজ¦ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
অতীতের থেকে বর্তমানের হজ¦ ব্যবস্থাপনা আমূল পরিবর্তিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই পরিবর্তন আমার নিজের দেখা এবং সে জন্য আমি সত্যই খুব আনন্দিত। তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশে আজকে ‘ই-হজ¦ ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করেছে, যার ফলে অতীতের মতো আর হাজীদের কষ্ট হয় না। সেই কষ্ট আমরা দূর করতে পেরেছি। এ জন্য তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, হাব, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী হজ¦যাত্রীদের কাছে দেশ ও দেশের জনগণ এবং ’৭৫-এর ১৫ আগষ্ট নিহত জাতির পিতা, বঙ্গমাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য দোয়া প্রত্যাশা করে বলেন, করোনাভাইরাসের মতো এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে যেন বাংলাদেশ এবং বিশ্ব তথা সমগ্র মানব জাতি রক্ষা পায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যেন বাংলাদেশ এবং বিশ্ব রক্ষা পায় এবং বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি করছে সেই উন্নয়নের পথে যেন আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারি সে জন্যও তিনি হজ¦যাত্রীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারে এবং উন্নত সুন্দর জীবন পেতে পারে। সকল হজ¦যাত্রীর আকাক্সক্ষা যেন আল্লাহ তায়ালা পূরণ করেন এবং তাদের জন্য হজ¦ যেন সহজ হয় এবং আল্লাহর দরবারে যাতে কবুল হয় সে দোয়াও করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা হজে¦ যাবেন তাঁরা সৌদি আরবের সমস্ত নিয়ম-কানুন এবং আইন মেনে চলবেন। কারণ, ইবাদত বন্দেগি করার পাশাপাশি দেশের মান সম্মান রক্ষা করাও সকলের কর্তব্য। পাশাপাশি নিজেরা নিজেদের সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন যাতে সুস্থ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করতে পারেন।
হজ¦যাত্রীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা আল্লাহর মেহমান হয়ে হজ¦ পালন করতে যাচ্ছেন, তাঁদের কাছে এটুকুই আবেদন করব, আপনারা বাংলাদেশের জনগণের জন্য দোয়া করবেন। সেই সঙ্গে আমি আমার যে আপনজন হারিয়েছি, তাঁদের জন্যও দোয়া করবেন। করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছর হজে¦ যাওয়া বন্ধ ছিল। এখন করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে তাই হজে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এই সুযোগ করে দেয়ার জন্য সৌদি বাদশাহকে ধন্যবাদ জানাই।’ পরে প্রধানমন্ত্রী হজ¦যাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।