নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বছরের নানা সময়েই প্রত্যক্ষ করে সাধারণ মানুষ। প্রতি বছরই দাম বাড়ে জিনিসপত্রের। তবে এবারের মূল্যবৃদ্ধি বেশি উদ্বেগজনক। এর সঙ্গে বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত। শুধু বাংলাদেশেই যে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে এমন নয়। তবে তুলনামূলক বিচার বিশেষণে গেলে বোঝা যায় সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি কিছুটা অস্বাভাবিক। একদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি তো রয়েছেই, অন্যদিকে বাজার মনিটরিংয়ে ঘাটতি, তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় নির্ধারণের সঙ্কট এবং সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার অভাবই এর নেপথ্য কারণ। দেখা যাচ্ছে চাল-আটা-ডাল-তেল- এই চার প্রধান খাদ্যপণ্যে তিন বছর আগের তুলনায় একজন ক্রেতার চল্লিশ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের আয় কি ৪০ শতাংশ বেড়েছে? বাড়েনি। বরং কোভিড-১৯ কেড়ে নিয়েছে বহু মানুষের উপার্জনের উপায়। ফলে, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের সমতুল্য। প্রাণীখাদ্যের দামও বেশ বেড়েছে। ফলে, মানুষ খাদ্যের জন্য যেসব প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল সেগুলোর দামও বেড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে ডিম দুধ মাছ মাংসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে, মানব স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি উঠেছে চরমে। বিশ্বের মূল্যসূচকের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা বিষয়টি আরও ভাল বুঝতে পারব। গত বছর মূল্যসূচক বৃদ্ধির বিষয়টি ছিল অপ্রত্যাশিত : ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত খাদ্যমূল্য তুলনামূলক কম ও স্থির ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে গড়ে মূল্য বৃদ্ধি পায় ২৮ শতাংশ। গত বছর ভেজিটেবল অয়েলের দাম রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। চিনির দাম বাড়ে ৩৮ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বর্তমানে সামগ্রিক মূল্যসূচকের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন শ্রমিকদের মজুরি আয়ের উল্লেখযোগ্য হ্রাসের কারণে এটি আরও উদ্বেগজনক, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয়। ২০২১ সালে জ্বালানি তেলের দামের ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের খাদ্যপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও খাদ্য শস্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত ও হ্রাস পাচ্ছে। এখন আবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক হয়ে উঠেছে।
সব মিলিয়ে সামনে এক কঠিন সময়ই চোখ রাঙাচ্ছে। ফলে, তার মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জও যে কঠিন হবে, সে বিষয়ে সংশয় নেই। এটি যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, সেটিও বলাইবাহুল্য। সঙ্কট মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ যেমন জরুরী, তেমনি প্রতিটি দেশেরও নিজস্ব পদক্ষেপ ও করণীয় রয়েছে। আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক সঙ্কট উত্তরণে সাফল্যের পরিচয় দেবে- এমনটাই প্রত্যাশা।