জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ॥ শিশুদের খেলাধূলায় উৎসাহিত করতে হবে

14
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে যুক্ত হয়ে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০১৩-২০২০ সালের বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলাধুলার পরিবর্তে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ-আইপ্যাডে বুঁদ নগর জীবনে কিভাবে শিশুদের ভবিষ্যতকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সেই বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন।
অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তাদের শিশুদের বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহী করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, খেলাধূলা তাদের যে কোন ধরনের ভুল পথে যাওয়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হবে। কারণ জাতি গঠনে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বেশিরভাগ শিশু প্রায় সময় ফ্ল্যাটে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং আইপ্যাড নিয়ে সময় কাটাচ্ছে। যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই অমঙ্গলজনক।
বুধবার দেশের ক্রীড়াঙ্গনে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮৫ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও সংগঠককে ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ ‘২০১৩-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি এলাকাতে খেলার মাঠ রাখার নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিশুরা এখন তো সব ফ্ল্যাটে বাস করে এবং ফ্ল্যাটে বাস করে করে সেগুলো সেই ফার্মের মুরগির মতোনই হয়ে যাচ্ছে। আর এখন তো মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপ, আইপ্যাড এগুলো ব্যবহার করে সারাক্ষণ ওর মধ্যে পড়ে থাকা। এটা আসলে মানসিকভাবে, শারীরিকভাবেও সুস্থতার লক্ষণ না।’
ঢাকা শহরে খেলাধূলার জায়গা যে কম, সে কথা তুলে ধরে বিষয়টিকে ‘সবচেয়ে দুর্ভাগ্য’ হিসেবে বর্ণনা করে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। তবে প্রত্যেকটা অভিভাবক যদি একটু আন্তরিক হন এবং নিজেদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে একটু খেলাধুলা, দৌড়-ঝাঁপের মধ্য দিয়ে শারীরিক, মানসিক সবকিছু বিকশিত হবার সুযোগ পায় সেটাই আমি বলব। এতে আপনাদের শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলার প্রতিও মনোযোগী হবে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা তাহলে অন্যদিকে যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে ৮৫ গুণী খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠককে ২০১৩ হতে ২০২০ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল ৭৭ জন পুরস্কার বিজয়ীর হাতে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়ালি উপস্থিতিতে আরও ৮ বিজয়ীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে খেলাধূলার উন্নয়নের ওপর একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮৫ ক্রীড়া ব্যক্তি ও সংগঠককে এই মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকে একটি আঠারো ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ পদক, এক লাখ টাকার চেক এবং একটি সনদপত্র পান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শহীদ লে. শেখ জামালকে ২০২০ সালের খেলোয়াড় ও সংগঠক হিসেবে (মরণোত্তর) পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তার পক্ষে পরিবারের সদস্য এবং খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খেলাধুলা শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিকচর্চা একটি জাতির জন্য অপরিহার্য। এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে আমাদের একেবারে ছোট শিশু থেকে সকলকে উৎসাহিত করতে হবে এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে। তাদের মনটাও ভাল থাকবে, তারা ভালভাবে লেখাপড়া শিখবে এবং বিপথে যাবে নাÑ এটাই আমার বিশ^াস। সরকারপ্রধান বলেন, খেলাধূলা এক ধরনের শরীরচর্চা। এতে আমাদের ছেলেমেয়েরা শারীরিক এবং মানসিকভাবেও যথেষ্ট উপকৃত হয়। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক ধরনের খেলাধূলা ছিল, সেগুলো আবার সচল করতে হবে। এ জন্য আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা এবং আন্তঃ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাগুলো যেন ব্যাপকভাবে চলে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, সাঁতার, হকিসহ বিভিন্ন খেলার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় খেলাগুলো যেমন- ডাংগুলি, সাত চারা, গোল্লাছুট থেকে শুরু করে হাডুডুসহ যেসব খেলাগুলো প্রচলিত ছিল, সেগুলো আবার চালু করতে হবে। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। যেটা আমরা ফুটবলের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা শুরু করেছি। ফলে আমাদের অনেক নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা জাতীয় পর্যায়েও বিশেষ অবদান রাখছে। কাজেই এদিকে সকলে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।
এ ব্যাপারে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার তাঁর সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা চাই এ খেলাধূলার বিষয়ে আমাদের আরও উদ্যোগী হতে হবে। রাজধানী ঢাকায় খেলাধূলার জায়গা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি প্রত্যেক এলাকাতেই যেন খেলার মাঠ থাকে। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। কারণ, প্রত্যেকটা এলাকাতেই খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সংসদ ভবনের পাশে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের খেলাধূলার জন্য একটা একাডেমিও নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
’৯৬ সালে তিনি প্রথম সরকার গঠনের পর বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের অলিম্পিকে আমেরিকা থেকে ৭২টি পদক জয় করে আনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আরও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের আহ্বান জানান।