কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে বিদ্যমান সড়কে রক্ষাণাবেক্ষণের গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন সড়ক নির্মাণে ব্রেক (বিরতি) দিয়ে পুরনো সড়কে নজর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। এ সময় পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য শরিফা বেগমসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যমান সড়কগুলো মেরামত করতে হবে। নতুন নির্মাণে ব্রেক দিয়ে পুরনো সড়কে নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন সড়ক আর না বানিয়ে, চলমান সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের পরিধি বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশে সড়কের ঘনত্ব বেশি। এজন্য নতুন সড়ক নির্মাণে ব্রেক দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আমরা প্রচুর সড়ক করেছি। এখন এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রশস্ত করতে হবে। এটাই ছিল আজ প্রধানমন্ত্রীর মূল বার্তা। তিনি বলেন, আইটি সেক্টরে আমাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সাররা আইটিতে দক্ষ হয়ে ভালো আয় করছে। প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি এপ্রিসিয়েট করেন এবং এখানে তিনি আরও বিনিয়োগ করবেন বলে জানান।
এদিন একনেক সভায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিংসহ ১১ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮২৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৬৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১ হাজার ২২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৬৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৩৯টি হাইটেক আইটি পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি স্থানে সফটওয়্যার টেকনোলজি, আইটি বিজনেস, ট্রেনিং এ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন সম্ভাব্য অঞ্চলে আইটি পার্ক সৃষ্টির মাধ্যমে আইটি, হাইটেক সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসা কার্যক্রম শুরুর জন্য এই সেক্টরের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা এবং দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিপিও সেক্টরের তরুণ উদ্যোক্তাদের একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। এজন্য বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) বিদ্যমান ৩৩/১১ কেভি পোল মাউন্টেড উপকেন্দ্রের নবায়ন ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। নেসকো এলাকায় স্মার্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বাস্তবায়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪১ কোটি টাকা। ইনসটেলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। লোকাল গবর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (এলওজিআইসি) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যশোরে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদী, নামাকুড়া নদী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর অংশ বিশেষের নব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার (প্রথম পর্যায়ে ৪০টি) নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। দিনাজপুর সড়ক বিভাগাধীন হিলি (স্থলবন্দর)-ডুগডুগি-ঘোড়াঘাট জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণসহ ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিদ্যমান সরু/জরাজীর্ণ কালভার্টগুলো পুনর্র্নিমাণ এবং বাজার অংশে রিজিড পেভমেন্ট ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। শেরপুর (কানাসাখোলা)-ভীমগঞ্জ-নারায়ণখোলা-রামভদ্রপুর-পরানগঞ্জ-ময়মনসিংহ (রহমতপুর) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১৪টি) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা।