কাজিরবাজার ডেস্ক :
সদ্যপ্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জাতীয় সংসদে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। সবোর্চ্চ বাজেট উপস্থাপনকারী সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেটের আকার ছিল সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। আর শেষ বাজেট ছিল সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে না ফেরার দেশে চলে যান ৮৮ বছর বয়সী দেশবরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া।
১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেওয়া আবুল মাল আব্দুল মুহিত পঞ্চাশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন।
শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৬ সালে মুহিত যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। ২৫ বছরের সরকারি চাকরিজীবনের প্রায় ১৩ বছর পূর্বপাকিস্তান এবং কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেন। বিভিন্ন ভূমিকায় দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান মুহিত।
এরপর ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডি-তে। ১৯৮২-৮৩ সালে তৎকালীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময় প্রথমবার অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৫ অর্থবছরে দায়িত্ব পালন করে বিদেশে চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় ফিরলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুহিতের ওপর। সেই দায়িত্ব তিনি পালন করে গেছেন টানা ১০টি বছর।
দেশের পেশ করা মোট ৫০টি বাজেটের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ তিনটি, আজিজুর রহমান মল্লিক একটি, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিনটি, এম এন হুদা একটি, এম সায়েদুজ্জামান চারটি, মেজর জেনারেল এম এ মুনিম দুটি, ওয়াহিদুল হক একটি, শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছয়টি, মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম দুটি, এম সাইফুর রহমান ১২টি ও আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি এবং আ হ ম মুস্তফা কামাল তিনটি বাজেট পেশ করেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জীবনের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে এরশাদ সরকারের সময় জাতীয় সংসদে পেশ করেন। এরপর ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
তৃতীয় বাজেট ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সরকারে অধীনে ২০০৯-১০ অর্থবছরে। ওই বছর আবুল মাল আবদুল মুহিত ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
দেশের ৩৯তম ও তার ঘোষিত চতুর্থ বাজেট ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে। ওই বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। পঞ্চমবারের মতো ২০১১-১২ অর্থবছরে মুহিতের ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬ষ্ঠ বারের মতো বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। এই বাজেট ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটা ছিল তার ৭ম বাজেট। তার ৮ম বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এই বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।
দেশের ৪৪তম বাজেট ঘোষণা হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরের। যা আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ৯ম বাজেট। এই বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিজের ১০ম বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। এর আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে মুহিত ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। যা ছিল তার জীবনের ১১তম বাজেট। তার জীবনের শেষ বাজেট ও দেশে ৪৭তম ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। তার শেষ বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজের শেষ কর্মদিবসে এক বিদায়ী অনুষ্ঠানে হাসতে হাসতে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি আমার জন্য খুব আনন্দের বিষয়, আমাকে বিদায়-টিদায় করতে হয়নি, আমি নিজে নিজেই বিদায়টা নিয়ে নিয়েছি।’