একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
হাওরে বোরো ধানের ঝুঁকি কমাতে স্বল্পজীবনকালীন আগামজাতের ধান চাষ, টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সময়মতো সংস্কারে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধি এবং ধান পাকার পর তা দ্রুত কাটার জন্য হাওরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত ধান কাটার মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার প্রদানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। শনিবার সকালে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ও বোরো ধান ক্ষেত পরিদর্শনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক শনিবার দিরাই উপজেলার বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাওয়া চাপতির হাওর পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি মিডিয়াকে বলেন, বাঁধগুলোর মেইনটেন্যান্স রক্ষণাবেক্ষণ আশানুরুপনা। যে ভাবে কিছুটা উন্নতি হয়ে এদের আরো উন্নতি হতে হবে। যে নিয়মে চলে এগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। আমরা তাড়াতাড়ি চেষ্টা করবো এই নিয়ম কাুননগুলো আরো কঠিন করে যাতে বাঁধগুলো যথাযথভাবে রক্ষা করা যায় তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বাঁধের কাজের অনিয়মের তথ্য প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো।
তিনি আরো বলেন, হাওরে ১২-১৪ লাখ টন ধান হয়, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ধান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, কোন কোন বছর আগাম বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। এ ঝুঁকি কমাতে ১৫-২০ দিন আগে পাকে এমন জাতের ধানচাষে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছে। এসব জাত চাষে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। ব্লাস্ট রোগ হাওয়ায় ব্রি২৮ ও দেরিতে পাকার কারণে ব্রি২৯ ধান হাওরে চাষ না করার জন্য কৃষকদেরকে এ সময় আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, হাওরের বিস্তীর্ণ জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল বোরো ধান হয়। এ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে, সেজন্য উচ্চফলনশীল জাতের ধান যেমন ব্রিধান ৮৯, ব্রিধান ৯২ এবং বিনাধান-১৭ চাষ করতে হবে। আমরা আপনাদেরকে এসব উন্নত জাতের ধানের বীজ দেব। আপনার এগুলো চাষে এগিয়ে আসবেন। বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী বোরোতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার দেয়া হবে। এছাড়া, সারা বছর ধরে ভিজিএফসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে, যাতে খাদ্যের জন্য কেউ কষ্ট না করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে আছেন। ফসল রক্ষায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও সময়মতো সংস্কারের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সকলে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাঁধগুলো অনেকক্ষেত্রে সময়মতো সংস্কার হয় না। এক্ষেত্রে বাঁধ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে বিদ্যমান নীতিমালার প্রয়োজনে পুনমূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া, পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নদী খননে উদ্যোগ নেয়া হবে। শ্রমিক সংকটের কথা চিন্তা করে ও দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটার জন্য হাওরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ড. রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান কৃষকবান্ধব সরকার ৭০% ভর্তুকিতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার কৃষকদের দিচ্ছে। ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে মন্ত্রী আরও বলেন, কৃষিমন্ত্রী হিসেবে আগাম বন্যা বা আকস্মিক ঢলের কারণে হাওরে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছরই আতঙ্কে থাকি। বৃষ্টি আর না হলে এ বছরের অবশিষ্ট ধানগুলো কৃষকের ঘরে তোলার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্র হাওরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, দেশের অন্য অঞ্চল থেকেও যন্ত্র আনা হচ্ছে। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও রাজনীতিবিদরা কৃষকের পাশে রয়েছে। পরিদর্শনকালে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট সুহেল আহমদ, সহ-সভাপতি সরিাজ-উদ-দৌল্লা সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট রিপা সিনহা সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে কৃষিমন্ত্রী সদর উপজেলার জাওয়ার হাওরে স্বল্পজীবনকালীন আগামজাত বিনাধান-১৭ এবং উচ্চফলনশীল ব্রিধান ৮৯ কর্তন ও কৃষকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ধান কাটার উদ্বোধন করেন ও ধান কাটার যন্ত্র ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার’ কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন।