কর্মজীবন পরিকল্পনা নীতিমালা হচ্ছে ॥ তিন বছরের বেশি জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা যাবে না

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ বছর চাকরির পর অবসরের সুযোগ রেখে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এবং সরকারের উপসচিব ও তদুর্ধ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য কর্মজীবন পরিকল্পনা নীতিমালা নামে একটি নতুন নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষাজীবনে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্তরা বিদেশে ডিগ্রী ও প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন। ৪৫ বছরের বেশি বয়স হলে জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগ পাবেন না। তিন বছরের বেশি কোন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রাপ্তরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। তবে বিভাগীয় মামলায় দন্ডিতরা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাবেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনকে গতিশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে এই নীতিমালা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে কাজের গতি বাড়বে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক প্রশাসন গড়ে উঠবে। বিভিন্ন সময়ে গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও কমিটিসমূহ একটি যুগোপযোগী সিভিল সার্ভিস গঠনের যেসব পরামর্শ তথা সুপারিশ করেছে, তার আলোকেই এই নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে নিয়োগে মেধার প্রাধান্য, পদোন্নতিতে প্রশিক্ষণের ফলাফলের গুরুত্ব, স্বচ্ছ ও বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি প্রদান, উদ্ভাবনী কাজের জন্য পুরস্কার ও আর্থিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা থাকছে এ নীতিমালায়। এসডিজি-২০৩০ এবং ভিশন-২০৪১’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ন্যায়নিষ্ঠ, মেধাবী, সৃজনশীল, দক্ষ, নিরপেক্ষ প্রতিযোগিতামূলক ও জনমূুখী সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলাই এই নীতিমালার লক্ষ্য। ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে সরকারী সেবা প্রদানে একটি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও ব্যবস্থাপনাই এর উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা আগে সচিব কমিটির অনুমোদন নেব। তার পর নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। শীঘ্রই এই সচিব কমিটিতে পাঠানো হবে।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন সময় এই নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয় এবং একাধিক ওয়ার্কশপ ও বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের মতামত নিয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রণীত নীতিমালার আলোকে চাকরিতে প্রবেশ পর্যায়ে ও পরবর্তীতে উচ্চতর সকল পর্যায়ে শূন্য পদের সংখ্যা, প্রতিবছর অবসরে যাওয়ার সংখ্যার আলোকে বছরভিত্তিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পেশাগত দক্ষতা বিশ্বমানে উন্নীত করার জন্য চাকরির প্রতিটি ধাপে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরিকাল, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদন, বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের প্রাপ্ত নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শৃঙ্খলা প্রতিবেদন এবং সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মূল্যায়ন বিবেচনা করে নির্দিষ্ট নম্বর বণ্টনের বিধান রাখা হয়েছে। চাকরির ২০তম বছরে উপসচিব কিংবা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেতে ব্যর্থ কর্মকর্তাকে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে উপসচিব বিংবা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে সকল প্রকার আর্থিক সুবিধাসমেত অবসরে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ নীতিমালায়।
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে সিনিয়র সহকারী সচিব বা সমমর্যাদার পদে পাঁচ বছরের সন্তোষজনক চাকরির জন্য ১০ নম্বর, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনে ৫০ নম্বর, বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের জন্য ১০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ১০ নম্বর, শৃঙ্খলা প্রতিবেদনে ১০ নম্বর এবং এসএসবি’র মূল্যায়নের জন্য ১০ নম্বর থাকবে। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতিতে উপসচিব পদে তিন বছর চাকরির জন্য ১০ নম্বর, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনের জন্য ৫০ নম্বর, এসিএডি প্রশিক্ষণের মূল্যায়নে ১০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ১০ নম্বর, শৃঙ্খলা প্রতিবেদনে ১০ নম্বর এবং এসএসবি’র মূল্যায়নে ১০ থাকবে। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে যুগ্মসচিব পদে ২ বছরের চাকরির জন্য ১০ নম্বর, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনে ৫০ নম্বর, এসএসসি প্রশিক্ষণের মূল্যায়নে ১০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা ১০ নম্বর, শৃঙ্খলা প্রতিবেদনে ১০ নম্বর এবং এসএসবি’র মূল্যায়নে ১০ নম্বর থাকবে। তবে কোন কর্মকর্তা চাকরি জীবনের ২০ বছরের মধ্যে উপসচিব কিংবা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি না পেলে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে পদোন্নতির সকল শর্তপূরণ সাপেক্ষে তাকে উপসচিব বা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিতে পারবে। আবার ২০ বছর চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হলে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে অবসর প্রদানের সুযোগ থাকছে। সরকার চাইলে চাকরি ২৫ বছর পূর্তিতে যে কোন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারবে। এখনও এ ব্যবস্থা কার্যকর আছে।
সূত্র জানায়, পদায়নের ক্ষেত্রে মৌলিক মাপকাঠি হবে দক্ষতা, যোগ্যতা, পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান। সরকার উপযুক্ত কর্মকর্তাকে তার জ্যেষ্ঠতা, একাডেমিক শিক্ষা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চাকরির অভিজ্ঞতা, বিশেষ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা বিবেচনা করে সচিব পদে পদায়ন করা হবে। সমগ্র চাকরি জীবনে ৫ বছরের বেশি লিয়েনে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা, নৈতিকতা এবং উৎকৃষ্ট কাজের স্বীকিতি দেয়া হলে দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তারা অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনে উৎসাহী ও মনোযোগী হবেন। সেই ক্ষেত্রে প্রণোদনা হিসেবে উদ্ভাবনী কাজের স্বীকৃতি ও পুরস্কার, বিদেশ প্রশিক্ষণে প্রেরণ ও উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ প্রদান, ভাল কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদায়ন বিবেচনা, প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বৈদেশিক মিশন, দূতাবাসে পদায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান, দুর্গম এলাকা, পার্বত্য জেলায় কর্মরতদের পরবর্তীতে পদায়নের ক্ষেত্রে ‘এ’ অথবা ‘বি’ ক্যাটাগরির জেলায় পদায়ন তথা পোস্টিং দেয় হবে। দুর্গম, পাহাড়ি, হাওর এলাকায় পোস্টিংয়ের সর্বোচ্চ সময় হবে মাত্র এক বছর ছয় মাস। মাঠ প্রশাসনসহ কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী কর্মকর্তাদের পদায়ন, দেশী ও বিদেশী প্রশিক্ষণে তাদের মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান সরকারী নীতিমালা, বিধি, সার্কুলার, আদেশ ইত্যাদি সংশোধন, বিয়োজন, পরিমার্জন করার প্রয়োজন হলে তা করা হবে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮১’ অনুসারে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োগ চূড়ান্ত করবে। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণে মেধাবীদের অগ্রাধিকার এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে চাকরির সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। মেধাবী তরুণরা যেন সরকারী চাকরিকে পেশা হিসেবে গ্রহণে আগ্রহী হন সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। চাকরিতে শিক্ষানবীসকাল হবে দুই বছর। বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ, নির্ধারিত সংখ্যক কেস নথির টীকা-টিপ্পনী প্রস্তুত, ট্রেজারি প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় পরীক্ষায় সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়া, অর্থাৎ সকল প্রকার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিভাগীয় পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা, চাকরিকাল দুই বছর পূর্ণ হওয়া এবং সন্তোষজনক চাকরিকাল পূর্ণ হলেই কেবল চাকরি স্থায়ী করা হবে। নব নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাগণ যোগদানের পর পরই ১ বছর ৬ মাসের আবশ্যিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬ মাসের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ, সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে আইন ও প্রশাসন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তার মধ্যে ৬ মাস প্রশাসন একাডেমিতে এবং কোর্সের ধারাবাহিকতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চারমাস সংযুক্ত থাকবেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখার কাজের বিষয়ে ধারণা লাভ করবেন। ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্য সার্ভে এ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে যারা সর্বোচ্চ ফলাফল করবেন তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। এছাড়া সম্ভব হলে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে(বিএমএ) ওরিয়েন্টেশন কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। তবে বিএমএ’র কোর্স চাকরি স্থায়ীকরণের শর্ত হিসেবে নেয়া হবে না।
চাকরি স্থায়ী হওয়ার তিন বছর পর সহকারী কমিশনার পদে ওই সব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হবে যারা সাফল্যের সঙ্গে ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে সিনিয়র স্কেল পাবেন। সেই ক্ষেত্রে সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের কার্যাবলী সংক্রান্ত একটি স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। চাকরি ছয় বছর পূর্তিতে ইউএনও পদে পোস্টিং দেয়া হবে। পোস্টিংয়ের আগে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যারা লিয়েনে থাকার কারণে এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তাদের জন্য দুই সপ্তাহের ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর ধারাবাহিকতায় সাত বছর চাকরি পূর্তিতে অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক পদে পদায়ন করা হবে। পদায়নের আগে দুই সপ্তাহের ভূমি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং প্রশিক্ষণের ফলাফল পদায়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে।
উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবশ্যই ‘এ্যাডভান্স কোর্স অন এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কোর্স’ বাধ্যতামূলকভাবে করতেই হবে। প্রশিক্ষণে দাফতরিক, বাস্তবধর্মী দাফতরিক সমস্যা সমাধান, ক্রিটিক্যাল রিজনিং, একক ও প্রেজেন্টেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব ও কৌশলগত পরিকল্পনা, সরকারী ক্রয় ব্যবস্থাপনা, বাজেট ও অর্থ ব্যবস্থাপনা, উদ্ভাবন, ই-গবর্ন্যান্স, ই-নথির ব্যবহার এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এসিএডি প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিদেশে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পাঠানো হবে। জাতিসংঘ স্বীকৃত কোন দেশের বেস্ট প্র্যাকটিস সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনে প্রাধান্য দেয়া হবে। যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য সিনিয়র স্টাফ কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে স্ট্র্যাটেজিক লিডারশিপ, নীতিনির্ধারণী কর্মকৌশল প্রস্তুতকরণ, পলিসি বিশ্লেষণ, পাবলিক ম্যানেজমেন্ট রিফর্ম, জিও ডিপি কোলাবরেশন নেগোসিয়েশন স্কিল, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট, বিনিয়োগ পরিবেশ, অর্থনৈতিক কূটনীতি, সরকার পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু অর্ন্তর্ভুক্ত থাকবে। কোর্সের অংশ হিসেবে তাদেরকে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় অথবা আন্তর্জাতিক সংস্থায় এক্সপোসুয়ার ভিজিটে প্রেরণ করা হবে। বিভিন্ন দেশ, সংস্থা, ইনস্টিটিউটের বেস্ট প্র্যাকটিস সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনকে প্রাধান্য দেয়া হবে।
অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য পলিসি প্ল্যানিং এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কোর্স(পিপিএমসি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অন্যান্য প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে হবে। বিশেষায়িত জ্ঞান ও মানব সম্পদ তৈরির জন্য উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিবগণের জন্য নির্দিষ্ট বিষয় ভিত্তিক কাজের ধরন বিবেচনা করে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। সিনিয়র সচিব, সচিবগণ দেশের সমসাময়িক ও সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়ে কর্মশালা, সেমিনারে অংশ নেবেন। জনপ্রশাসন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কোলেবরেশনে বছরব্যাপী নিয়মিত কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে ইউএনও হিসেবে ৫ বছর, এডিসি হিসেবে ২ বছর এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞ উপসচিবদের মধ্যে থেকে নির্বাচন করা হবে। একজন ডিসি এক জেলায় তিন বছর এবং একাধিক জেলায় ৪ বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুযায়ী তিন বছরের বেশি কেউ ডিসি হিসেবে থাকার নিয়ম থাকছে না। ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার বয়স হবে ৪৫ বছর। বর্তমানে ডিসি পদে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৫০ বছর নির্ধারণ করা আছে। যুগ্মসচিবদের মধ্য থেকে বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ করা হবে। তাদের সর্বোচ্চ বয়স হবে ৫২ বছর এবং এক বিভাগে দুই বছরের বেশি কেউ বিভাগীয় কমিশনার থাকতে পারবেন না। তবে একাধিক বিভাগে তিন বছর থাকতে পারবেন। অতিরিক্ত সচিবদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হবে এবং তিন বছরের বেশি এক মন্ত্রণালয়ের কাজ করতে পারবেন না। তবে সরকার চাইলে এই মেয়াদ হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবে। সরকার উপযুক্ত কর্মকর্তাদের সচিব পদে নিয়োগ দেবেন। সেই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, চাকরির অভিজ্ঞতা, বিশেষ বিষয়ে জ্ঞান এবং দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে। কমপক্ষে তিন বছর সচিব পদে চাকরি করা কর্মকর্তাকে সিনিয়র সচিব পদে পদায়ন করা হবে। মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব পদে পদায়নের ক্ষেত্রে তিন বছর সচিব পদে চাকরির অভিজ্ঞতার সঙ্গে মাঠ প্রশাসনে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বৈদেশিক উচ্চতর ডিগ্রী এবং শিক্ষাজীবনের সকল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী, বিভাগ ও ক্লাসপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়নে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। শিক্ষাজীবনে কোন পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্তরা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পোস্টিং পাবেন না। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিযুক্ত ক্যাডার কর্মকর্তাদের সরকারী বৃত্তি ও উচ্চতর বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে দুই বছর সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিযুক্ত কর্মকর্তারা মূল বেতনের ৫০ ভাগ হারে প্রণোদনা ভাতা পাবেন। পদায়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিবেচনায় নেয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে শতকরা ৭৫ ভাগ নম্বর পাওয়া কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কর্মজীবনে বিভাগীয় মামলায় দ-প্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা যাবে না। একজন কর্মকর্তা সমগ্র চাকরি জীবনে ৫ বছরের জন্য লিয়েনে যেতে পারবেন না।